রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়

 রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ যদি কমে যায় শরীরে কি কি সমস্যা দেখা দেয় তা জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু আপনার জন্য। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে কি কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এবং করণীয় কি কি বিস্তারিত জানবো এই আর্টিকেল থেকে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে। তো আসুন জেনে নেই রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি করণীয়।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমার লক্ষণ কি কি

রক্তে হিমোগ্লোবিন আমাদের মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ রক্তের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কিছুটা কমে যায়। তবে বেশ কিছু কারণে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা অনেক ক্ষেত্রেই কমে যায়। তবে আমাদের শরীর থেকে হিমোগ্লোবিন কিভাবে কমে সেই লক্ষণ গুলো আমাদের সঠিকভাবে জানা নেই। সেই লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা খুবই জরুরী।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমার লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম লক্ষণ গুলো হলোঃ
  • আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে ত্বক ফ্যাকাস হয়ে যায়। তাছাড়াও অন্য কারো শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে মুখ, মারি ও নিজের চোখের পাতা ফ্যাকাসে রঙের হয়ে যায় এবং শুকনো দেখায়।

  • শরীরে হিমোগ্লোবিনের ফলে আয়রনের ঘাটতি হয়। আয়রনের ঘাটতির ফলে আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে থাকে এবং এই হৃদস্পন্দন এর চিকিৎসা না করালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে আমাদের শরীরের কোষ গুলিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে আমাদের চুল ও ত্বক ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
  • আয়রনের অভাবে আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে থাকে। তখন শরীরের কোষ ও টিসুগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমোগ্লোবিনের অসুবিধা হয়। শরীরের কোষ ও টিস্যুগুলিতে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পায় না তখন আমাদের যেকোনো কাজ করতে ক্লান্ত লাগে বা অসুবিধা হয়।
  • শরীরে লৌহ রক্ত কণিকার ঘাটতির কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও কমে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য লৌহ রক্ত কণিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই রক্তে হিমোগ্লোবিনের পাশাপাশি লোহিত রক্ত কণিকার গুরুত্ব অপরিসীম।
  • আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে আমরা এইসব লক্ষণ দেখে বুঝতে পারব আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কতটুকু কম। সঠিকভাবে তথ্য নেওয়ার জন্য আমরা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারি।

রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে কি কি ধরনের সমস্যা দেখা দেয়

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের বা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। আমরা অনেকেই জানিনা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে কি কি ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে কি কি ধরনের সমস্যা দিতে পারে।

হিমোগ্লোবিনের অভাব আমাদের শরীরে একটি সাধারণ সমস্যা। ভিটামিন এবং খনিজের অভাবের কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়। ছোট থেকে বড় যুবক বা বৃদ্ধ সবার শরীরেই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে। যদি গর্ভবতী মহিলা অপুষ্টির শিকার হন এবং তাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ যদি কমে যায় তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠতে পারে। হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্ত প্রবাহের কারণে রক্তের ক্ষয় হতে থাকে। শরীরে অক্সিজেনের অভাবে আমাদের শরীরের শক্তির অভাব হতে শুরু করে এর ফলে কোন ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

তাছাড়াও রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে আমাদের ত্বক হলুদ বা ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি আমাদের শরীরে এটি কোন রোগের লক্ষণ নয়। সঠিক পরিমাণে প্রোটিনের অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। আর গর্ভবতী মহিলাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এমনিতেই কম হতে শুরু করে । যেসব কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাট দেখা দিতে পারে তা হলঃ

  • ক্যান্সার
  • আয়রনের অভাব
  • লিউকোমিয়া
  • এইডস
  • সিরোসিস
  • জিনগত অস্বাভাবিকতা
  • ক্ষত থেকে রক্তপাত
  • অতিরিক্ত রক্তপাত
  • পেটের আলসার
  • মুত্রাশয় থেকে রক্তপাত
ইত্যাদি এসব কারণে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হতে পারে। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে শরীরে যেসব সমস্যা হয় তা নিচে দেওয়া হলঃ
  • মাথাব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • মাথা ঘোরা
  • যেকোনো কাজ করতে অক্ষম
  • খিটখেটে মেজাজ
  • ক্লান্ত বোধ করা
  • দুর্বল লাগা
  • হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি করা উচিত

আমরা জানি রক্ত হিমোগ্লোবিন কমে গেলে আমাদের শরীরে কি কি ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তো আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে আমাদের কি করা উচিত। আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা যখন স্বাভাবিক তুলনায় কমে যায় তখনই আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে আমাদের শরীরের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে শুরু করে। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে কি কি করা উচিত তা হলোঃ

আমাদের শরীরে আয়রন ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। আয়রন, ফাইবার ও ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করে। ফাইবার জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের ঘাটতি কমিয়ে ফেলে। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

এই বিটের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড, আয়রন ও পটাশিয়াম রয়েছে। একটি আপেল আমাদের শরীরে রক্ত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রয়েছে। পাশাপাশি ডালিম বা বেদানা আমাদের শরীরের রক্ত হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহের রক্ত চলাচল অব্যাহত রাখে। তাই নিয়মিত ডালিম, আপেল বেদানা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিকভাবে রাখতে পারি। 

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে কোন কোন খাবার

রক্তের কোষে এক ধরনের প্রোটিন হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। এটি আমাদের শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। আমাদের সুস্থ সাধারণ জীবন যাপনের জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ সঠিক থাকা খুবই জরুরী। আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে আমরা কিছু পুষ্টিকর খাবার খেয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাণ মতো রাখতে পারি। প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর অনেক উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নেই সে উপায় গুলো কি কিঃ
  • লৌহ যুক্ত খাবারঃ শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার এক বিশেষ কারণ। আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য লোহিত রক্তকণিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই আমাদের লৌহ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন মুরগির কলিজা, ডিম, আপেল, ডালিম, বেদানা, তরমুজ, কুমরার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিসমিস ইত্যাদি লৌহ যুক্ত খাবার আমাদের খাওয়া উচিত।
  • ভিটামিন সিঃ আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম দেখা দিতে পারে। আমাদের শরীরে ভিটামিন সি ছাড়া লোহিত রক্তকণিকা শোষণ হয় না। তাই আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাণ মতো রাখার জন্য ভিটামিন সি খাওয়া অন্তত জরুরী। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে পেঁপে, লেবু, কমলা, সবুজ ফুলকপি, স্ট্রবেরি, আঙ্গু্‌র , টমেটো ইত্যাদি।
  • ফলিক অ্যাসিডঃ ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের এক প্রকার হলো ফলিক অ্যাসিড। ফলিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে রক্ত কণিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। সাধারণত ফলিক এসিড পাওয়া যায় কলিজা, ভাত, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, সিমের বিচি , কলা , বাদাম ও সবুজ ফুলকপিতে এই জাতীয় খাবারে।
  • ডালিমঃ ডালিম আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং দেহে রক্তের চলাচল যথাযথভাবে সচল রাখে। ডালিমে থাকে আয়রন , ক্যালসিয়াম, আশ ও শর্করা জাতীয় পুষ্টি। তাই প্রতিদিন আমাদের সবার একটি মাঝারি সাইজের ডালিম খাওয়া উচিত।
  • আপেলঃ আপেলকে আয়রনের উৎস হিসেবে ধরা হয় এবং আপেলে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসা সহ একটি আপেল খেয়ে আমরা আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারব। তাই আমাদের প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়া উচিত।
  • বিটের রসঃ বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড , ফাইবার , পটাশিয়াম ও আইরন রয়েছে। বিটের পুষ্টি আমাদের শরীরের লাল রক্ত কণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য

এই আর্টিকেলটি থেকে জানতে পেরেছি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে কি কি ধরনের সমস্যা হয়। আরো জেনেছি রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি করা উচিত এবং কোন কোন খাবার গুলো আমাদের শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই আর্টিকেলটিতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম বা বেশি হলে কি করনীয় সফল তথ্য এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তরটি পেয়েছেন। এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ওয়েবসাইট দিয়ে ঘুরে দেখার অনুরোধ রইলো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url