হার্ট ভালো রাখার জন্য কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত

হার্ট আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। হার্টের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে অনেক জনের হয়ে থাকে। হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় সঠিকভাবে আমাদের জানা নেই এবং হার্ট ভালো রাখার জন্য কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত। তাই আসুন জেনে নিই হার্টের রোগ থেকে বাঁচার জন্য এবং হার্ট ভালো রাখার জন্য কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত । এই আর্টিকেলটিতে সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

হার্ট  ভালো রাখার জন্য কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিতহার্ট আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। আজকে আর্টিকেল থেকে জানব হার্ট ভালো রাখার জন্য কোন খাবার খাওয়া উচিত, আর হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার কোনগুলো এ সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে পারবেন এই আর্টিকেল থেকে।

হার্ট অ্যাটাক কি 

মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, যা সাধারণত আমরা হার্ট অ্যাটাক হিসেবে জানি। হার্ট অ্যাটাক মূলত হয় যখন হৃৎপিণ্ডের পেশীতে একটি অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পৌঁছায় না বা পাই না সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। করোনারি ধমনীতে হঠাৎ সংকীর্ণ হওয়ার ফলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক যেটা আমাদের শরীরের হৃদপিন্ডের বেশিতে রক্ত পৌঁছাতে বা প্রবাহকে বাধা দিয়ে থাকে। তাই হার্ট অ্যাটাক যেন না হয় সেক্ষেত্রে আমাদের হার্ট এটাকের লক্ষণগুলো জানা অবশ্যই জরুরী।

হার্টের সমস্যা বোঝার উপায়

হার্ট আমাদের শরীরে শুধু রক্ত পরিবহনে নয় এবং সারা শরীরের শারীরিক ও মানসিক সমন্বয় কর্মকাণ্ডের মাঝে সাধন করে থাকে । শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করলে আপনি বুঝে নেবেন আপনার হার্ট এখনো ভালো আছে। দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখা আমাদের হার্ট ভালো রাখার প্রথম শর্ত। আমরা জানি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যার হার্টের পালস রেট থাকে প্রতি মিনিটে ৬০-১০০ মাত্রাতে। অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে তাদের পালস রেট প্রতি মিনিটে ৪০-৪৫ হয় বা কমও হয়।


একজন চিকিৎসকের মতে একজন মানুষের শরীরে স্বাভাবিক এই মাত্রাই পালস রেট থাকলে তার হার্ট যথেষ্ট ভাল হিসেবে ধরা হয়। আমাদের শরীরে হার্টকে ভালো রাখার জন্য কি কি খাবার খাওয়া উচিত সেই সব খাবারগুলো যদি আমরা জেনে বুঝে খাই তাহলে আমাদের শরীরে হার্ট ভালো থাকে এবং হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের রোগের ঝুঁকি কম থাকে। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ হলো হার্ট। হার্টের সমস্যা যদি হয় তাহলে সেটা বোঝারও অনেক উপায় রয়েছে। হার্টের সমস্যা হলে আপনি নিজে নিজেই বুঝতে পারবেন।

হার্টের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপের কারণে, শরীরের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে, শরীরের ওজন অতিরিক্ত হলে, খাদ্যের তালিকায় অস্বাস্থ্যকর খাবার থাকলে, মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে এবং মানসিক চাপের ফলে হার্টের মারাত্মক সমস্যা হয়ে থাকে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই আমাদের জানা উচিত কোন কোন খাবার গুলো হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।

হার্ট অ্যাটাক হওয়ার লক্ষণ কি কি

আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। আমাদের হার্টে যদি প্রচুর পরিমাণে সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের হার্ট এটাক হওয়ার ঝুঁকি অনেক থাকে। আবার হার্টবিট এর পালস রেট যদি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আসুন জেনে নি ই হার্ট এটাকার লক্ষণ সমূহঃ

  • শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাঃ হার্ট এটাকে প্রায় এক বা দেড় মাস আগে থেকেই আমাদের শারীরিক দুর্বলতা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। কোন কারণ ছাড়াই আমাদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার কোন কাজ করার ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি হাঁপিয়ে যাওয়া এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া। এরকম সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে আমাদের হৃদপিন্ডে কোন রোগ হয়েছে। সে সময় আমাদের হৃদপিন্ডের বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। সেই ক্ষেত্রে আবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও রয়েছে।
  • অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়াঃ আমাদের শরীর বিভিন্ন কারণে বা কাজ করার কারণে ঘেমে যায়। আবার অনেক সময় ঘেমে যাওয়ার কোনো কারণ থাকে না । এরকম কোন কারন ছাড়া গেমে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা অবহেলা করবেন না কারণ এটা একটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে।
  • বদ হজমের সমস্যাঃ অনেক গবেষণায় জানা গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কিছুদিন আগে আগে থেকেই বেশিরভাগ হার্ট এটাকের রোগীদের বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাধারণত বুকে হালকা জ্বালাপোড়া হলে সেটা আমরা বদহজম হিসেবে ধরি। কিন্তু এটাও একটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ। কোন কারণ ছাড়া বমি বমি ভাব বা মাথা মাথা ঘোরাড় এটাও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
  • বুকে চাপ ধরাঃ হার্ট অ্যাটাকের সময় অনেক জনেরই বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। তাই আমাদের বুকে যদি ভারি ভারি ভাব অনুভব হয় বা বুকে চাপ ধরে থাকে তাহলে সেই বিষয়টিকে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

হার্ট ভালো রাখার জন্য কোন খাবার খাওয়া উচিত

হার্টের রোগ আমাদের শরীরের একটি জটিলতম রোগ। তাই হার্টের রোগ থেকে জন্য আমাদের সঠিক খাদ্যের অভ্যাস করা উচিত। ডাক্তারের ওষুধের চেয়ে আমাদের ঘরোয়া উপায় গুলো হার্টকে অনেক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই আসুন জেনে নেই হার্ট ভালো রাখার জন্য কোন কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত। যেমনঃ

  • রসুনঃ প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে রসুনে যেটা আমাদের শরীরে হার্টের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। রক্তে থাকা কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে রসুন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও আমাদের শরীরের রক্তচাপ ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই সকল তথ্যগুলো পুষ্টিবিজ্ঞানী রাই প্রকাশ করেছেন। আরো বলেছেন হার্টের সুস্থতা ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন খাবারের সাথে আমাদের ২-৪ কোয়া রসুন খাওয়া উচিত।
  • আপেলঃ আপেল আমাদের হাটের যেকোন রোগের সমাধান করে থাকে। আপেলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, নিয়াসিন, থিয়ামিন, ম্যাগনেসিয়াম, কোলেন ও ফাইবার ইত্যাদি। তাই হার্ট ভালো রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়া উচিত। এর ফলে আমাদের হার্টের রোগ বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
  • মিষ্টি আলুঃ সাধারণত সবাই বলে থাকে আলু বেশি খেলে নাকি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে মিষ্টি আলু এর বিপরীত ও ব্যতিক্রম। মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন এ, লাইস ওপেন ও দ্রবণীয় আঁশ যা আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী হিসাবে ধরা হয়। আর মিষ্টি আলু লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স জাতীয় খাবারের মধ্যে পড়ে। তাই আমাদের হার্টের কথা ভেবে প্রতিদিন খাবারের সাথে একটি মিষ্টি আলু রাখতেই পারি।
  • ছোলাঃ ছোলার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। এই ছোলা আমাদের দেহে কত রকমের উপকার করে সেটা আমরা বলে শেষ করতে পারবো না। ছোলা একটি কার্ডিওভাসকুলার পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফাইবার পাওয়া যায়। পরিমাণ মতো ছোলা আমাদের দেহের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ছোলা আমাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত যেটা আমাদের হাটের জন্য অনেক উপকারী হবে।
  • টক দইঃ টক দই হার্টের পাশাপাশি আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য অনেক উপকারী। হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা প্রতিদিন টক দই খাওয়ার অভ্যাস করুন। টক দই আপনার শরীরের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। টক দই আমাদের ত্বকের জন্যও উপকারী কারণ টক দই আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন প্রত্যেকটি মানুষেরই এক থেকে দুই কাপ টক দই খাওয়া উচিত।
এছাড়াও আমরা হার্টের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক ধরনের খাবার খেতে পারি যেমন কলা, পেয়ারা, কফি, কমলালেবু, লাউ, নাশপাতি, গ্রিন টি, জাম্বুরা, আদা, দুধ, আমলকি, লাল মরিচ ইত্যাদি খাবার খেতে পারি। এই সকল খাবারগুলো যদি আমরা নিয়মিত খাই তাহলে আমাদের হার্টের জন্য অনেক উপকার ।

হার্টের ক্ষতি করে কোন খাবারগুলো

আমরা অনেকেই জানি হার্ট ভালো রাখার জন্য আমাদের কি কি খাবার খাওয়া উচিত। আর হার্ট ভালো রাখার জন্য আমাদের খাদ্যের তালিকায় অনেক ধরনের খাবার থাকে। সেগুলো খাবার নিয়মিত খেলে আমাদের হার্টের কোন রোগ হয় না। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা হার্টের ক্ষতি করে কোন খাবারগুলো । হার্ট ভালো রাখার জন্য খাবারের তালিকায় শুধু কোন খাবার রাখবো শুধু এটা নয় কোন খাবারগুলো রাখতে হবে না সেটাও জানা জরুরী। তো আসুন জেনে নেই হার্টের ক্ষতি করে কোন খাবারগুলো।
  • কলিজা
  • মগজ
  • ফাস্টফুড
  • মাছের ডিম
  • মাছের মাথা
  • রেড মিট
  • নারিকেল
  • তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার
  • অতিরিক্ত লবণ ও চিনি জাতীয় খাবার
  • কোমল পানীয়
  • অতিরিক্ত বিস্কুট ও চানাচুর
  • চিংড়ি মাছ ইত্যাদি
এসব খাবারগুলো আমাদের হার্টের অনেক ক্ষতি করে থাকে। এসব খাবার গুলো আমরা সামান্য পরিমাণেও গ্রহণ করা উচিত নয়। খাবার থেকে আমাদের দূরে থাকাই উচিত। পরিমাণ মতো খেলে হয়তো সমস্যাটা তেমন দেখা দিবে না। কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের হার্টের রোগের পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থেকে যায়। তাই আমাদের এসব খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত।

পরিশেষে

আমরা পুরো আর্টিকেল থেকে জেনেছি হার্টের সমস্যা বোঝার উপায়, হার্ড ভালো রাখার জন্য কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং না খাওয়া উচিত এই সকল তথ্য । এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কেও জেনেছি। তো আমরা যদি এই সকল বিধি নিষেধ গুলো মেনে চলি তাহলে অবশ্যই আমাদের হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে পারব এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবো। প্রিয় পাঠক আশা করি আপনার কাছে আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url