ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ ও যেভাবে ঘুমানো উত্তম
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । আমরা জানি ইসলামে শরীয়তের নিয়মে ঘুমানোর কিছু নিয়ম ও বিধি নিষেধ রয়েছে। তাই একজন মুসলিম হয়ে ইসলামের যেভাবে ঘুমানো নিষেধ ও যেভাবে ঘুমানো উত্তম সেই নিয়ম অনুসরণ করে আমাদের ঘুমানো উচিত। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেয়া যাক ইসলামের যেভাবে ঘুমানো নিষেধ যেভাবে ঘুমানো উত্তম সম্পর্কে।
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেদ ও যেভাবে ঘুমানো উত্তম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে ইসলামে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে উত্তম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ
আমরা জানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায়ই প্রত্যেকটি কাজেরই সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের নিয়মে ঘুম ও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। ইসলামের শরীয়তের নিয়মে আপনি কিভাবে ঘুমাবেন তার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে। মুসলিম ভাই ও বোনেরা সবাই জানেন যে ঘুম আল্লাহর দেওয়া একটি বড় নেয়ামত। কারণ আমরা সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি এবং ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে থাকি। সারা দিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য ঘুম আমাদের ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্যই আল্লাহ তাআলা রাত তৈরি করেছেন কারণ আমরা সারাদিনের ক্লান্তি রাতের ঘুমের মাধ্যমে যেন নিবারণ করতে পারি। আমরা অনেক মানুষ আছি যারা ইসলামে কিভাবে ঘুমানো নিষেধ কিভাবে ঘুমানো উত্তম এই সকল বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানিনা। কিন্তু আমরা মুসলিম হয়ে অবশ্যই আমাদের এই সকল বিধি-নিষেধ গুলো মেনে চলা অবশ্যই উচিত। আমরা সকলে এই বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করব কারণ আমরা চাই না ঘুমের মাধ্যমে যেন আমাদের পাপ হোক।
ইসলামের শরীয়তের নিয়মে বেশ কিছু ঘুমানোর বিধি নিষেধ আছে। আমরা হয়তো অনেকেই ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ সম্পর্কে জানিনা। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথমত উপর হয়ে ঘুমানো নিষেধ করা হয়েছে। কারণ উপর হয়ে ঘুমানো সাময়িক আরামদায়ক হলেও দীর্ঘ সময় এভাবে ঘুমালে মেরুদন্ড, শ্বাস-প্রশ্বাস, ও ঘুমের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় উপর হয়ে ঘুমিয়ে থাকলে মেরুদন্ডের স্বাভাবিক হাড়ের বাঁক বদলে যেতে পারে যার ফলে ঘার ও পিঠে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো যে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা) উপর হয়ে শুতে নিষেধ করেছেন। আমাদের নবী এভাবে ঘুমাতে নিষেধ করার পিছনে হাদিসের দুইটি কারণ কে চিহ্নিত করা হয়েছে যেমন প্রথমত মহান আল্লাহতালা উপর হয়ে ঘুমানো পছন্দ করেন না এবং দ্বিতীয় কারণ হল উপর হয়ে ঘুমানো জাহান্নামীদের ঘুমানো। জাহান্নামিদের উপর করেই এই জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেওয়া হবে।
আরো একটি হাদিসে বর্ণনা করা আছে যে আবু জার রাঃ বলেন, আমি উপর হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় আমাদের নবী আমার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন এবং তার পা দিয়ে আমাকে খোঁচা মেরে বললেন, হে জুনাইদিব এটাতো জাহান্নামীদের সয়ন। এছাড়াও ইসলামী শরীয়তের নিয়মে বাম কাত হয়ে ঘুমানো নিষেধ করা হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেভাবে ঘুমানো উত্তম
আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা ইসলামে কিভাবে ঘুমানো উত্তম এবং ঘুমানো নিষেধ। তো আসুন জেনে নেই ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেভাবে ঘুমানো উত্তম। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে রাতে ঘুমানোর সময় আমাদের উপর হয়ে ঘুমানো উচিত না। কারণ উপুর হয়ে ঘুমালে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। তাই ইসলামের শরীয়তের নিয়মে যেভাবে ঘুমানো উত্তম সে সে সকল বিষয়গুলো আমাদের জেনে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত
আমরা হয়তো অনেকেই অনেক রকম ভাবে ঘুমানো পছন্দ করি। আবার অনেকেই আছে চিৎ হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করি। ইসলামের দৃষ্টিকোণে চিত হয়ে ঘুমানো জায়েজ রয়েছে । কিন্তু আপনাকে কিছু বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনি যখন চিৎ হয়ে ঘুমাবেন তখন খেয়াল রাখবেন যেন আপনার লজ্জা স্থান দেখা না যায়। কারণ চিত হয়ে ঘুমানোর সময় আমাদের অনেকেরই লজ্জাস্থানের উপর থেকে কাপড় সরে যেতে পারে। তাই আমাদের এই সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য করা খুবই জরুরী।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) যখন বিশ্রাম নিতেন তখন তিনি বেশিরভাগ সময় ডান কাত হয়ে বিশ্রাম নিতেন। বিভিন্ন হাদিসে বর্ণনা করা রয়েছে যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) নিজ বিছানায় যখন বিশ্রাম নিতে যেতেন তখন তিনি ডান কাত হয়ে নিদ্রায় যেতেন। তাই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর সুন্নত আদায়ের জন্য ইসলামী শরীয়তের নিয়মে ডান কাত হয়ে ঘুমানো উচিত।
বর্তমানে বিভিন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ডান পাশ হয়ে ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যে সকল খাবার গুলো গ্রহণ করে থাকি এগুলো খাবার আমাদের পাকস্থলী শোষণ করে নেয়। আর এই শোষণের পথ আমাদের শরীরে ডান দিকে অবস্থিত। তাই আমরা যদি ইসলামের শরীয়তের নিয়মে ডান কাত হয়ে ঘুমায় তাহলে আমাদের খাবার হজম হইতে সুবিধা হয়। এমনকি আমাদের হার্টবিট ও হার্টের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
কোন সময় ঘুমালে বরকত কমে যায়
সারাদিনের ক্লান্তি নিবারণ করার জন্য আমাদের শারীরিকভাবে ঘুমের খুবই জরুরী। ঘুম আমাদের শরীরকে ক্লান্তিমুক্ত করে এবং শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমরা জানি মানুষেরা সারাদিন পরিশ্রম করার পরে বিশ্রাম নেয়ার জন্য সারারাত ঘুমায় যাতে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে । কিন্তু ইসলামে কিছু সময় ঘুমাতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ ওই সময় ঘুমালে আপনি আল্লাহর বরকত থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আমরা জানি যে ফজরের নামাজের মধ্যে দিয়ে আমাদের সকলের দিনের শুরু হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) সকালকে উম্মতের জন্য বরকতময় করার দোয়া করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন, হে আল্লাহ আমার উম্মতের ভোরবেলাতে তাদেরকে বরকত প্রাচুর্য দান করুন। { সুনানে তিরমিজিঃ১২১২} তাই আপনি যদি সকালে কোন কাজ শুরু করেন তাহলে আল্লাহতালা নিজের থেকে আপনার কাজের উপর বরকত দান করবেন।
বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই ফজরের নামাজ পড়ার পরে ঘুমিয়ে যেতে পছন্দ করি, বিশেষ করে শহরের মানুষদের কাছে এ বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় তারা ফজরের নামাজ ঘুমিয়ে যেতে পছন্দ করে। আবার অনেক মানুষ আছেন যারা ফজরের নামাজ আদায় করেন না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করেছেন এশার নামাজ আদায় করার পর আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া উত্তম এবং তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অনেকগুলো শারীরিক উপকারিতা রয়েছে।
আমাদের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অন্যতম উত্তম উপকারিতা হলো ফজরের নামাজের সময় আমাদের ঘুম থেকে উঠতে বেশি কষ্ট হয় না। আবার রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফলে ফজরের নামাজের জন্য শরীরে কোন অলসতা বোধ কাজ করে না এবং শারীরিকভাবে আরাম বোধ হয়। অনেক আলেমগণদের মতে ফজরের নামাজ পড়ার পর ঘুমিয়ে পড়াকে মাখরুম মনে করা হয়। তাই আমাদের তাই আমাদের ফজরের নামাজ আদায়ের পর ঘুমানোর জন্য নিষেধ করা হয়েছে।
ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
আমাদের সকল মুসলিম ভাই ও বোনেদের রাতে ঘুমানোর আগে বেশ কিছু কাজ রয়েছে। এই সকল কাজগুলো সঠিকভাবে পালন করাকে আল্লাহতালার এবাদত পালন করা হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও এ সকল কাজগুলো করার ফলে আমরা রাতে ঘুমানোর সময় শয়তান এবং খারাপ জিন থেকে সুরক্ষিত থাকবো। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং ইসলামে যেভাবে ঘুমানো উত্তম। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে। যেমন
- ঘুমানোর আগে ওযু করে ঘুমানোঃ আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত যে আপনি যখন ঘুমাবেন আপনাকে অবশ্যই ঘুমানোর আগে ওযু করে ঘুমাতে হবে কারণ ইসলামের দৃষ্টিকোণে ওযু করে ঘুমাতে যাওয়া এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করতেন । এই অজু করার কারণে আল্লাহতালা আপনার হেফাজত করার জন্য একটি ফেরেশতা পাঠাবেন।
- আল্লাহ তালার নামে দরজা বন্ধ করাঃ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেই আমাদের উচিত আল্লাহ তালার নাম নিয়ে দরজা বন্ধ করা। কারণ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের চারপাশে খারাপ জিন চলাফেরা করে। এই সকল খারাপ জিন থেকে হেফাজতে থাকার জন্য আল্লাহ তাআলার নাম নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে ।
- ঘুমানোর আগে আল্লাহ তালার কাছে ক্ষমা চাওয়াঃ ঘুমানোর আগে আমাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সারাদিনের করা সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। কারণ পৃথিবীতে আজকে কাটানো রাত আপনার জন্য শেষ রাত হতে পারে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহতালার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ঘুমানোর আগের দোয়া গুলো পড়ে ঘুমানো।
- ঘুমানোর সময় অবশ্যই ডান কাত হয়ে ঘুমানোঃআমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) যখন ঘুমাতেন তিনি সবসময় ডান-কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমাদেরও উচিত ডানখাত হয়ে ঘুমানো কারণ এতে আমাদের শারীরিক উপকার হবে এবং একটি সুন্নতও পালন করা হয়ে যাবে।
ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ এবং যেভাবে ঘুমানো উত্তমঃ লেখকের মধ্যে
আজকের এই আর্টিকেলটিতে ইসলামে যেভাবে ঘুমানো নিষেধ ও যেভাবে উত্তম, কোন সময় ঘুমালে বরকত কমে যায়, ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি সঠিকভাবে ঘুমানোর নিয়ম জেনে না থাকেন এবং ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে জেনে না থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিতে পারবেন। এরকম আরো তথ্য জানার জন্য ওয়েবসাইটটিকে ফলো করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url