আসল মধু চেনার উপায় - মধু খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই জানি মধু আমাদের শারীরিকভাবে কোন কোন উপকার করে। কিন্তু আমরা আসল মধু কোনটা সেটাই চিনে উঠতে পারি না। আসল মধু চেনার অনেক উপায় রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো আসল মধু চেনার উপায় কি কি এবং মধু খাওয়ার নিয়ম কি কি। আসুন তাহলে জেনে নেই এই সকল তথ্য সম্পর্কে।

ভুমিকা

মধু, পরিশ্রমী মৌমাছি দ্বারা উত্পাদিত সোনার অমৃত, বহু শতাব্দী ধরে মানবতা লালন করে আসছে। এর অতুলনীয় স্বাদ, প্রাকৃতিক মিষ্টতা এবং অগণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা এটিকে বিশ্বব্যাপী রান্নাঘরের একটি প্রধান স্থান করে তোলে। যাইহোক, বাজারে নকল পণ্যের বন্যা বৃদ্ধির সাথে, প্রতারকদের কাছ থেকে আসল মধু চেনা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে উঠেছে। এই বিস্তৃত নির্দেশিকায়, আমরা আসল মধু শনাক্ত করার বিভিন্ন দিক, এর উৎপাদনের সূক্ষ্মতা, বৈশিষ্ট্য এবং জাল বিকল্প থেকে আলাদা করে এমন আলামত লক্ষণগুলি অন্বেষণ করব।

আসল মধু চেনার উপায় কি কি

মধুর উপকারিতা ও , কার্যকরী ক্ষমতা আমরা বলে শেষ করতে পারবো না । আমরা বলতে পারি আমাদের সৌন্দর্যের চর্চা, শারীরিক রোগ প্রতিরোধ এবং ডায়েটের জন্য মধুর অনেক গুণ রয়েছে। আমরা এ সকল উপকার পেতে পারি একমাত্র খাটি মধু থেকে। কিন্তু এখন বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে নকল মধুর ভিড়ে আসল মধু চেনা বড় মুশকিল হয়ে গেছে। আর আমরা জানি নকল দিয়ে আসলের কাজ হয় না। তবে আসল নকল মধু চেনার কিছু উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নেই আসল মধু চেনার উপায় সম্পর্কেঃ
  • আসল মধু অনেকটাই ঘন এবং অনেক বেশি আঠালো যুক্ত হয়। আর নকল মধু পাতলা এবং কমাঠালো হয়। সামান্য একটু মধু আপনি আপনার হাতের আঙ্গুলের উপর নিয়ে নাড়াচাড়া করলে বুঝতে পারবেন মধুটি ঘন বা আঠালো কিনা। আপনার যদি ওই মধু কম আঠালো এবং কম ঘন মনে হয় তাহলে সেটা নকল মধু।
  • একটি গ্লাসে পানি নিয়ে সেই পানিতে এক চামচ পরিমাণ মধু দিয়ে দিন। তারপর আস্তে আস্তে নাড়াচাড়া করবেন। যদি খেয়াল করেন মধু পানির সাথে মিশে যাচ্ছে তাহলে বুঝে নিতে হবে সেটা নকল। আর যদি হালকা নাড়াচাড়ার পরেও মধু পানিতে না মিশে তাহলে বুঝবেন সেটা আসল মধু।
  • মধু চেনার একটি বিশেষ উপায় হল ফেনা। আসল মধ্যে কোন সময় ফেনা হতে দেখা যায় না। কিন্তু মধুতে সেটা দেখা যায়। হাতের উপর কিছুটা মধু নিয়ে তাতে অল্প পানি ও দুই থেকে তিন ফোঁটা ভিনেগার মিশিয়ে রাখুন যদি ফেনার মত কিছু হয় তাহলে মধুটা অবশ্যই নকল।
  • আমরা হয়তো অনেকেই জানি নকল মধুতে আগুন দ্রুত ধরতে পারে না। কিন্তু আসল মধ্য থেকে খুব তাড়াতাড়ি আগুন ধরে যায়। তাই এক টুকরো তুলো মধুতে ভিজিয়ে নিন, তারপর সেটা আগুন ধরানোর চেষ্টা করুন। যদি আগুন দ্রুত না ধরে তাহলে সেটা নকল। আর যদি আগুন দ্রুত ধরে যায় তাহলে সেটা আসল মধু।
  • মধু বেশ কিছুদিন ঘরে রেখে দিলে তার ভেতরে চিনির মতো দানা জমতেই পারে। এরকম কিছু হলে আপনি আপনার মধুর পাত্রসহ একটু গরম পানিতে কিছুক্ষণ রেখে দিন। যদি আসল মধু হয় তাহলে সেই চিনিগুলো গলে স্বাভাবিক রূপে চলে আসবে। কিন্তু নকল মধু ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হবে না।
  • এক টুকরো ব্লোটিং পেপার নিন, সে পেপার এর উপর কয়েকটা মধু দিয়ে দিয়েন। যদি পেপারটি সম্পন্ন মধু চুষে নিতে সক্ষম হয় তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়। যদি মধু খাঁটি হতো তাহলে পেপারটি সম্পন্ন মধু চুষে নিতে সক্ষম হতো না।
  • এক টুকরো সাদা কাপড়ের উপরে কয়েক ফোঁটা মধু মাখিয়ে নিন। এভাবে কাপড়টি 30 মিনিটের মত রেখে দিন। তারপর সেটা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কাপড়টি ধোয়ার পরে যদি কাপড়ের কোন দাগ থেকে যায় তাহলে বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়। আসল মধু হলে কাপড়ে দাগ পড়ে থাকত না।

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা সকলেই আসল মধু চেনার বিভিন্ন রকম উপায় জানতে পেরেছেন। বাজারের মধু কিনতে গেলে অবশ্যই এই সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরেই মধু কিনে আনবেন নয়তো আপনি ঠকতে পারেন।

মধু সংরক্ষণ করার উপায় কি কি

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে মধু আমাদের শারীরিক কোন কোন ধরনের উপকার করে থাকে। আর মধু আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। আমাদের শারীরিক উপকারের জন্য আমাদের সকলের উচিত পরিমাণ মতো নিয়মিত মধু খাওয়া। কিন্তু বাজারের যে পরিস্থিতি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা বাজার থেকে আসল মধু ক্রয় করতে পারি না। আসল মধু কেনার জন্য আমাদের যেতে হয় বিভিন্ন মানুষদের কাছে যারা বন থেকে মধু সংগ্রহ করে আনে।

তো আমরা খাঁটি মধু পেলে অবশ্যই সেগুলো পরিমাণে বেশি ক্রয় করার চেষ্টা করি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা অতিরিক্ত মধু খেতে পারি না। তাই আমাদের বেশি ক্রয় করা মধু সংরক্ষণ ত্রুটির কারণে মধু সংরক্ষণ করে রাখতে পারি না। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই মধু সংরক্ষণ করার কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কেঃ
  • বায়ুরোধী পাত্রে মধু সংরক্ষণ করতে হবেঃ আমরা যে পাত্রে এই মধু রাখি না কেন পরিবেশের জীবাণু ও দূষিত গত কারণের জন্য মধুর পাত্রের ঢাকনা শক্তভাবে বন্ধ করে রাখতে হবে। এর ফলে আপনার ক্রয় করা মধু অতিরিক্ত আদ্রতা থেকে রক্ষা পায় এবং মধু ভালো রাখতে সাহায্য হয়।
  • শুষ্ক এবং শীতল জায়গায় সংরক্ষণ করাঃ আপনারা চাইলেই মধু আপনার রেফ্রিজারেটরের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। রেফ্রিজারেটরে রাখার কারণে আপনার মধু তাড়াতাড়ি স্ফটিক হয়ে যেতে পারে। স্পটিক হয়ে যাওয়া কোন খারাপ জিনিস নয়। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ মানুষই তরল মধুই খেতে পছন্দ করি। আমাদের মধু যেন স্পটিক না হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আমরা মধু রেফ্রিজারেটরে না রেখে নিজেদের আলমারির মত ঠান্ডা জায়গায় রাখতে পারি।
  • দূষণ ও জল এড়িয়ে চলুনঃ বয়ান থেকে মধু বের করার সময় কখনই নোংরা বা ভেজা কোন কিছু ব্যবহার করবেন না। নোংরা হবার কারণে মধু নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং পানির ছোঁয়া পেলে মধু বেশিদিন ভালো থাকে না।

মধু খাওয়ার নিয়ম

মধু আমরা অনেকে অনেক রকম ভাবে ব্যবহার করে থাকি। কেউ বা মধু আমরা দুধের সাথে মিশিয়ে খাই। আবার অনেকেই আছে হাতের তালুতে নিয়ে চেটে চেটে খাই। আসুন মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম আমরা জেনে নেই।

  • দইঃ টক দই যদিও খাবারের সাথে আমরা মধু মিশিয়ে খেতে পারি। এতে আমাদের খাবার গুলো খুব সুস্বাদু হয় এবং উপকারী হয়।
  • পাউরুটি এবং মাখনঃ পাউরুটি ও মাখনের সঙ্গে অনেকেই মধু মিশিয়ে খায়। তবে পাউরুটিও মাখনের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সেটা আসলেই খুবই মুখরোচক রুচিশীল ও উপকারী খাবার হতে পারে।
  • কেকঃ কেকে আমরা চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারি। মাথায় রাখতে হবে যে মধুর রং যত ধূসর হয়ে থাকে তেমনি তার স্বাদ তত ভালো হয়ে থাকে।
  • বাদামঃ বাদামের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এর উপকার বলে শেষ করা যাবে না। বাদাম এবং মধু দুটোই আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। তাই বাদামের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

অতিরিক্ত মধু খেলে কি কি হয়

এর পরিবর্তে আমরা অনেকেই মধু ব্যবহার করে থাকি। মধুতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থ। মধুতে পাওয়া যায় পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, সুক্রোজ, ভিটামিন, অ্যামিনো এসিড , খনিজ লবণ, জিংক, কপার ইত্যাদি রয়েছে। মধু শারীরিকভাবে রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আবার শরীরের ভেতর ও বাহিরের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করতে মধু আমাদের সাহায্য করে।

অনেক মানুষ আছে যারা ওজন কমাতে মধু খেয়ে থাকেন। পরিমাণ মতো মধু আমাদের পাকস্থলীতে অনেক পরিমাণ গ্লুকোজ তৈরি করতে সাহায্য করে। গ্লুকোজ আমাদের মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এর ফলে আমাদের ওজন কমে যায়। মধুর যেমন অনেক উপকারী দিক রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত মধু খেলেও কিছু ক্ষতি হয়। আসুন ট্রেনে অতিরিক্ত মধু খেলে কি কি ক্ষতি হয়ঃ

  • মধুর মধ্যে রয়েছে শর্করা ও ক্যালরি। তাই আমরা মধুকে কখনোই চিনির বিকল্প হিসেবে গণ্য করতে পারেনা। মজিদের রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া কার্বোহাইড্রেট যেটা আমাদের রক্তের শর্করার লেভেল বৃদ্ধি করে দেয়। তাই যাদের ডায়াবেটিসের মতো রোগ রয়েছে তারা অতিরিক্ত মধু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • অতিরিক্ত মধু খেলে আমাদের পেট ব্যাথা শুরু হতে পারে। তাই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের মধুকে এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো। যদি কেউ অন্য কোন কারণে মধু খেয়ে থাকেন তাহলে খুবই সামান্য পরিমাণে খাবেন।
  • অতিরিক্ত মধু খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরম পানিতে আধা চামচের মতো মধু দিয়ে খাবেন তবে উপকার পাবেন। অতিরিক্ত মধু খেলে হজম শক্তির সমস্যা হয়।
  • মধুর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া কার্বোহাইড্রেট। যা আমাদের শারীরিকভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যারা ওজন কমানোর জন্য মধু খেয়ে থাকেন তারা অবশ্যই মধুর সঙ্গে লেবুর রস এবং হালকা গরম পানি মিশিয়ে পান করুন তবে আপনি ফল পাবেন।
  • অতিরিক্ত মধু আমাদের দাঁতের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত মধু পান করার ফলে আমাদের দাঁতের উপরিভাগের এনামেল দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের দাঁত খুব সহজে দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে আসল মধু চেনার উপায় সম্পর্কে, মধু সংরক্ষণ করতে হয় কিভাবে, মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এবং অতিরিক্ত মধু খেলে কি কি হয়। এই সকল তথ্য নিয়েই আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে। যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি আপনার উত্তরটি লেখার জন্য। আশা করি আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তরটি পেয়েছেন। আর্টিকেলটি পড়ে যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url