লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত, নিয়ম,ফজিলত ও আমলনামা

লাইলাতুল কদর হলো একটা আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো শবে কদর বা সম্মানিত রাত। এ রাত জন্য অনেক ফজিলতপূর্ণ রাত। এ রাতে আমাদের সকলের গুনাহ মাফের ব্যবস্থা করা হয়। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে যাওয়া যাক লাইলাতুল কদর রাত সম্পর্কে।

প্রিয় পাঠক এ আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে, লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম সম্পর্কে , লাইলাতুল কদরের বিভিন্ন ফজিলত ও বিভিন্ন ধরনের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান নেওয়ার জন্য আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ানোর অনুরোধ রইলো।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা

লাইলাতুল কদর একটি আরবি শব্দ । শবে কদর একটি ফাঁসি শব্দ। শবে মানে রজনী বা রাত, আর কদর মানে হল সম্মান, মর্যাদ্‌ গুণাগুণ, সম্ভাবনা্‌ , ভাগ্য ইত্যাদি। তাহলে শবে কদর অর্থ হলো ভাগ্য রজনি বা মর্যাদাপূর্ণ রাত। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর। আমাদের পবিত্র কোরআন নাজিলার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা এই রাতকে হাজার হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত হিসেবে আমাদের হাদিয়া করেছেন। প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশটি রোজার রাতের রাতগুলোর মধ্যেই কয়েকটি লাইলাতুল কদরের রাত।

এটি হলো মহাসম্মানিত বা ভাগ্য নির্ধারিত রাত। লাইলাতুল কদরের রাতে আমাদের পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি মর্যাদা পূর্ণ কদর রজনীতে। কদরের রাত হাজারো মাসে রাতে চেয়ে উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে অবতরণ করেন, মহান আল্লাহতালার নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ফরজ পর্যন্ত। ( আল কুরআন, সূরা-৯৭{২৫} আল কদর)।

প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য। এই তথ্যগুলো জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকুন।

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ত

শবে কদরের রাতে আমরা মুসলমানরা আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য সারারাত নফল নামাজ আদায় করে থাকি। আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের কৃত গুনা, এবং আপনজনদের জন্য প্রার্থনা করে থাকি। আমরা অনেকেই হয়তো লাইলাতুল কদরের নফল নামাজের নিয়ত জানি না। আসুন জেনে নেই লাইলাতুল কদরের রাতের নফল নামাজের নিয়ত।

‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া'লা রাকআ'তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।’

অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবর।

লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম

লাইলাতুল কদরের নামাজের বিশেষ কোনো ধরনের নিয়ম বা আলাদা কোন পদ্ধতি নেই। লাইলাতুল কদরের রাতে নফল নামাজকেই লাইলাতুল কদরের নামাজ বলা হয়। এই রাতে নফল নামাজ দুই রাকাত করে যত সুন্দর মনোযোগ সহকারে ধীরে ধীরে পড়া যায় আমাদের জন্য ততই ভালো। এই নামাজের কোন নির্দিষ্ট রাকাত নেই। দুই রাকাত দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি তত পড়তে পারেন। তবে নামাজ আপনাকে অবশ্যই ধীরে শুষতে এবং মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।


আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য সে রাত্রে বেশি বেশি করে কোরআন পাঠ করবেন, দোয়া করবেন, ইস্তেগফার পড়বেন ও তওবা করবেন। আল্লাহতালার কাছে নিজের ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। এগুলো প্রার্থনা করা ছাড়া আপনি সেই রাত্রে বেশি বেশি সূরা কদর ও সূরা ইখলাস পড়তে পারেন। এতে আল্লাহ সন্তুষ্টি হয়ে যেতে পারেন। নামাজের শেষে এই দোয়াটি কমপক্ষে ১০০ বার করা উচিত‘সুব্‌হানাল্লাহি ওয়াল হাম্‌দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, লা হা’ওলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল্‌ আলীয়্যিল আযীম।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, ' ইয়া রাসুলুল্লাহ, শবে কদরের রাতে আমাদের কোন দোয়াটি পড়া উচিত। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে ইবনে মাজা)

লাইলাতুল কদরের গুরুত্বপূর্ণ আমল

আমরা হয়তো সকলে জানি লাইলাতুল কদরের রাত রমজানের শেষের দশ রাতের কোন এক বিজোর রাতে হয়ে থাকে। এই রাতে আমাদের সকলকেও উচিত বিভিন্ন রকম আমল করা। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা লাইলাতুল কদরের কোন কোন ধরনের আমল করা হয়। তাই আসুন জেনে নেই লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলের কথা।

  • ভেতর ও বাইরের পবিত্রতাঃ লাইলাতুল কদরের রাতে বরকত লাভের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে আমাদের শারীরিকভাবে ভেতর বাহিরে পবিত্র হয়ে থাকা এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহতালার দরবারে হাজির হওয়া। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন, ‘উত্তম হলো যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য; সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি-না মানুষের ভেতরটা সুন্দর না হয়। কারণ, মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৮৯)
  • রাতে নামাজ ও ইবাদতঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) কদরের রাতে ইবাদত ও নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫)
  • ক্ষমাপ্রার্থনাঃ আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব?তিনি বলেন, তুমি বোলো, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)
  • প্রতিটি বিজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকাঃ আমাদের সকলের উচিত শেষের ১০ রমজানের প্রত্যেকটি বিজয়ের রাতে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মগ্ন থাকায় উত্তম। কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৭)
  • জামাতের সঙ্গে এসব ফজরের নামাজ আদায় করাঃ বিশেষ করে আমাদের উচিত রমজানের শেষে ১০ রাতের বিজোড় রাতগুলোর এশা ও ফজরের নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে করা উচিত। তাহলে হাদিস অনুযায়ী আমাদের শবে কদরের রাতের ফজিলত হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬)

লাইলাতুল কদর এর ফজিলত

লাইলাতুল কদরের রাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল, তাই অন্যান্য সব মাসের চেয়ে রমজান মাসকে বেশি ফজিলতপূর্ণ এবং বরকতময় হয়েছে। আর রমজান মাসের প্রত্যেকটি রাতের মধ্যে যে রাতে কুরআন নাজিল হয়েছিল লাইলাতুল কদরের রাত, এ রাত আমাদের মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। লাইলাতুল কদর এর ফজিলত হলো এই রাতে ফেরেস্তারা নাযিল হয় এবং আল্লাহর বান্দাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন, ফজর নামাজ পর্যন্ত পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য।


এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয়। এই রাতে মশগুল ব্যাক্তিদের জন্য আল্লাহর পাঠানো ফেরেস্তাগণ দোয়া করেন। যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের রাতে পুরোপুরি ইমান সহকারে ও আল্লাহতালার কাছ থেকে বড় কোনো শুভ ফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, তার পেছনে সবগুলো গুনা মাফ হয়ে যাবে। এই কল্যাণকর রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র অভাগা ব্যাক্তিরায় বঞ্চিত হয়।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে , লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে যেমন, লাইলাতুল কদরের রাতের গুরুত্বপূর্ণ আমল, লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম, লাইলাতুল কদরের বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট অপশনে গিয়ে কমেন্ট করে জানাবেন এতে আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিতে উৎসাহিত হয়।

আর আপনার বন্ধুদের মধ্যে লাইলাতুল কদর রাতের সম্পর্কে যারা জানেনা তাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এরকম আরো সুন্দর সুন্দর তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটিকে নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url