সূরা আর রহমান নিয়মিত পাঠ করার ফজিলত ও উপকার
প্রিয় পাঠক আমরা অনেকেই সূরা আর রহমান পাঠ করে থাকে কিন্তু তার ফজিলত সম্পর্কে আমরা জানিনা। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো সূরা আর রহমান নিয়মিত পাঠ করলে আমাদের কোন কোন ধরনের ফজিলত হয়।
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে সূরা আর রহমান নিয়মিত পাঠ করার ফজিলত ও সূরা রহমান পাঠ করার উপকার সম্পর্কে। এই সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ুন।
সুরা আর রহমান সম্পর্কে
কোরআন শরীফের ৫৫ তম সূরা নাম হলো সূরা আর রহমান। এই সূরাটি মক্কা শরীফে নাযিল হয়েছিল। এই সুরাতে রয়েছে ৭৮ টি আয়াত এবং ৩৫২ টি শব্দ রয়েছে। কিছু মুসাফিরগণ এই সূরাটিকে মক্কায় নাজিল হয়েছে বলেন আবার কিছু মুসাফির গান বলেন এটি মদিনার যুগে অবতীর্ণ হয়েছিল। আর রহমানের অর্থ হলো পরম করুনাময়। সূরা আর রহমানের আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর যে অগণিত নিয়ামত দান করেছেন সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে। সূরা আর রহমান পরম করুন সমস্ত প্রাণীর জবাবদিহিতা এবং অসহায়ত্ব কথা বলেন।
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ “অতএব তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে” এই আয়াতটি মানুষকে আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কে সচেতন করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আর রহমানের জালেমদের জন্য কঠোর শাস্তির সতর্কবাণীর কথা বলা হয়েছে। আর আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার ফল কিভাবে ভোগ করবে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই সূরা আর রহমান পড়ার ফজিলত সম্পর্কে।
সূরা আর রহমানের অর্থ
সূরা আর রহমান এর প্রথম আয়াতটি হল আর রহমান দিয়ে শুরু হয়। আর রহমান দ্বারা বোঝানো হয় আল্লাহ পরম করুনাময়। সুরা আর রহমান এর প্রথম কয়েকটি আয়াতে আল্লাহতালা মানুষকে সৃষ্টির কথা বলেছেন এবং অলংকার স্বাস্থ্য শিখিয়েছেন। সূরা রহমান মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সূরা পাঠ করলে অনেক ধরনের ফজিলত পাওয়া যায়। আমাদের সকলেরই উচিত এই সুরা রহমান এর ফজিলত সম্পর্কে জানা।
সূরা আর রহমান পড়ার ফজিলত
আমরা অনেকেই আছি যারা সূরা আর রহমানের ফজিলত সম্পর্কে জানিনা। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই সূরা আর রহমান পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কেঃ
- যে ব্যক্তি প্রতিদিন নিয়মিত সূরা আর রহমান পাঠ করবে, তার প্রতি আল্লাহতালার রহমত বারবার বর্ষিত হবে এবং তার জন্য জাহান্নামের দরজায় বন্ধ হয়ে যাবে । তার চেহারা দিন দিন সুন্দর বানুরানী হয় এবং আল্লাহতালার বরকতের জন্য রুজি রোজগার বেড়ে যায়।
- চোখের রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির চোখে যদি সূরা আর-রহমান তিলাওয়াত করে ফু দেওয়া যায় তাহলে তার চোখ রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
- সূর্য উদয়ের সময় সূর্যের দিকে মুখ রেখে সূরা আর রহমান পাঠ করতে হবে এবং প্রত্যেকবার “ফাবি আইয়্যি আলায়ি রাব্বিকুমা তুকাযযিবান” পাঠ করার সময় ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা সূর্যের দিকে ইশারা করতে হবে। এভাবে ৪০ দিন পর্যন্ত আমল করলে আল্লাহর রহমতে সমস্ত মানুষ আল্লাহতালার বাধ্যগত ও অনুগত থাকবে।
- ফাবি আইয়্যি আলায়ি রাব্বিকুমা তুকাযযিবান এই ১২ ৩ বার পাঠ করে কোন মজলিসে উপস্থিত হওয়া যায় তাহলে সে সেখানে উত্তম ব্যবহার ও সম্মান লাভ করবেন।
সুরা রহমান নিয়মিত পাঠ করার ফলে আমাদের এই সকল ধরনের ফজিলত হয়ে থাকে।
সূরা আর রহমান পাট করার উপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে সূরা রহমান পাঠ করা হলে আমাদের কোন কোন ধরনের ফজিলত হয়। সূরা আর রহমান পাঠ করার ফলে আমাদের অগণিত রকমের উপকার হয়ে থাকে । এখন আমরা জানবো সূরা আর রহমান পাঠ করার ফলে বা মুখস্ত করে তেলাওয়াত করলে আমাদের কোন কোন উপকার হয়ঃ
দোয়ার জন্য সূরা আর রহমানঃ
আল্লাহতালা সূরা আল আনআমে বলেনঃ
এটি একটি বরকতময় কিতাব যা আমরা অবতীর্ণ করেছি, সুতরাং এর অনুসরণ করো এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো যাতে তোমরা তার রহমত পেতে পারো।
সূরা আর রহমান তেলাওয়াত করলে শুধু আমাদের এই জীবনে সাহায্য করবে না, আল্লাহতালার এই বাণী আমাদের পরকালেও সাহায্য করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন একজন সুপারিশকারী এবং সত্যবাদী আইনজীবী। যে ব্যক্তি তা নিজের সামনে রাখবে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি এটাকে পিছনে ফেলে যাবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিয়ে যাবে
স্বাস্থ্যের জন্য সূরা আর রহমান
পবিত্র কুরআনের প্রতিটি শব্দে রোগ নিরাময় ক্ষমতা রয়েছে। অসংখ্যবার দেখা গেছে যে সূরা আর রহমান পাঠ করার ফলে শারীরিক অসুস্থতার ওপর অলৌকিকভাবে প্রভাব পড়ে। অসংখ্যবার দেখা গেছে যে গুরুতর অবস্থায় নবজাতকের কাছে সূরা আর রহমান পাঠ করার কারণে তার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হার্টের সমস্যার মত গুরুতর রোগের জন্য সূরা আর রহমান পাঠ করলে উন্নতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্যতার জন্য সূরা আর রহমান
সূরা আর রহমান কুরআন শরীফের সেরা সুরদের মধ্যে একটি। সূরা রহমান পাঠ করলে আপনার মন এবং শরীরক খুব সহজে শান্ত হয়ে যায়। একজন ব্যক্তির শান্ত থাকার প্রভাবটা আরো বৃদ্ধি পায় যখন সে সূরা আর রহমানের অর্থ সহকারে পাঠ করে। এটি আমাদের উপলব্ধি করে যে আল্লাহ আমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন সেগুলি আমরা গ্রহণ করি।
নবী (সাঃ) সাহাবীদের কাছে গিয়ে সূরা রহমান তিলাওয়াত করলেন কিন্তু তারা সবাই শান্ত ছিলেন কোন সারা পায়নি। তিনি তখন তাদের বললেন যে তিনি যখন জ্বীনের কাছে গিয়েছিলেন এবং তাদের কাছে এটি পাঠ করেছিলেন এবং যখন রাসূল (সাঃ) এই সূরার এই আয়াতটি পাঠ করলেন- فَبِاَیِّ الآءِ رَبِّکمَا تُکَذِّبنِ ‘আর তুমি প্রভুর কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে’ তখন জিনরা জবাব দিত, ‘তোমার অনুগ্রহের মধ্যে এমন কিছু নেই যাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
বিয়ের জন্য সূরা আর রহমান পাঠ করা
আমাদের হালাল উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সূরা আর রহমান তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তা'আলা আমাদের অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করে দেয়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে একজন জীবনসঙ্গী পাওয়া যাবে। তাই সূরা আর রহমান নিয়মিত পাঠ করার কারণে আমাদের বিয়ের জন্য বড় ধরনের ফেলতে পারে।
সূরা আর রহমান আমাদের যে চাহিদা পূরণ করে
আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করলেন যে, যদি তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরও রুজি রোজগার বাড়িয়ে দেব। আর তোমরা যদি অস্বীকার করো তবে অনেক কঠিন শাস্তি পাবে। আল্লাহ তায়ালা কতই না করুনাময় যে তিনি আমাদের প্রতিশ্রুতি দেন এবং আমরা তার অপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
আর সূরা আর-রহমানের আয়াত “অতএব তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে” আমরা কতটা ধন্য তা বোঝার এবং চিন্তা করার জন্য বর্ণনা করে। এবং যখন আমরা তা বুঝতে পারি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তখন আল্লাহ আমাদেরকে আরও নিয়ামত দান করেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সূরা আর রহমান তেলাওয়াত করা
আল্লাহতালার প্রতিটি শব্দই একজন মুমিনকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে। সূরা আর-রহমান নিয়মিত তেলাওয়াত করলে একজন মুমিন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের খারাপ নজর থেকে মুক্তি, কাল যাদু থেকে সুরক্ষা এবং বিভিন্ন ধরনের বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
সফলতার জন্য সূরা আর রহমান তেলাওয়াত করা
আমরা সকলেই জানি আমাদের জীবনে আমরা যা কিছু অর্জন করেছি সবকিছুই আল্লাহতালার জন্য। তার রহমত ছিল বলে আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত ও অনুগ্রহের কথা জানার জন্য সূরা আর রহমান তেলাওয়াত এবং মুখস্থ করা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। আমরা যদি প্রতিদিন নিয়মিত সূরা আর রহমান তেলাওয়াত করে ইহকাল এবং পরকাল দুই কালের জন্য উপকারী হবে।
সূরা আর রহমান আমরা যদি নিয়মিত পাঠ করে থাকি তাহলে আমরা এইরকম ধরনের উপকার পেয়ে থাকি আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেল থেকে আমরা জেনেছি, সূরা আর রহমান এর সম্পর্কে, সুরা রহমানের অর্থ সম্পর্কে, সূরা আর রহমান নিয়মিত পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কে এবং সূরা রহমান নিয়মিত পাঠ করলে কোন কোন উপকার হয় এই সকল তথ্য সম্পর্কে জেনেছি। আশা করি কাঙ্খিত জবাবটি পেয়ে গেছেন। আশা করি পোস্ট যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url