ডাবের পানি পান করার উপকারিতা - ডাবের পানি সংরক্ষণ করার উপায়
প্রচন্ড গরমের তৃষ্ণা মিটাতে আমাদের কাছে ডাবের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানে না যে ডাবের পানি খেলে আমাদের কোন কোন উপকার হয় এবং কেন আমাদের ডাবের পানি খাওয়া উচিত। এই আর্টিকেলটিতে এই সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এই আর্টিকেলটিতে আরো আলোচনা করা হয়েছে, ডাবের পানি সংরক্ষণ করার উপায় সম্পর্কে, যে কারণে আমাদের ডাবের পানি খাওয়া উচিত, ডাবের পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে। এই সকল তথ্য জানতে আজকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
ডাবের পানি হল, কচি ডাবের ভিতরে থাকার রস। ডাব পরিপক্কভাবে পেকে গেলে সেই ডাব নারিকেল হয়ে যায় এবং ভেতরে থাকা ডাবের পানি কমে যায়। ডাবের পানি কমে যায় এবং ডাবের ভিতরেই পানির জায়গায় নারিকেলের শাস জমা হয়। কিন্তু ডাবের ভিতরে এই শ্বাসের পরিমাণ শাস একটু কম থাকে। বিভিন্ন অঞ্চলের দিকে এই ডাবের পানি বিশেষভাবে জনপ্রিয় যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহ এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এসব ডাবের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ডাবের পানিতে ভর্তি ১০০ গ্রামে ১৬.৭% ক্যালরি ক্যালরি থাকে।
গরমের সময় আমরা বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় পান করে থাকি। কিন্তু এসব কোমল পানি আমাদের শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি দিলেও এগুলো আমাদের ক্ষতি করে থাকে। এই দিক থেকে ডাবের পানি আমাদের জন্য খুবই উপকারী। ডাবের পানিতে শুধু পানি হিসেবে নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
ডাবের পানি সংরক্ষণ করার উপায়
ডাবের পানি খাওয়াই আমাদের শারীরিকভাবে অনেক উপকার হয়ে থাকে। ডাবের পানি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু ডাবের পানি আমরা বেশিদিন সংরক্ষণ করতে পারি না। কারণ ডাবের পানি সংরক্ষণ করার নিয়ম আমরা সঠিকভাবে জানি না। তাই এখন আমরা জানবো ডাবের পানি সংরক্ষণ করার উপায় সম্পর্কেঃ
ডাবের পানি সংরক্ষণ সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের প্রথমে একটি কচি ডাব নিতে হবে। তারপর সেই ডাবটি ভালো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। ডাবটি ভালোভাবে ধোঁয়া হয়ে গেলে সেটি থেকে পানি বের করে একটি মহসিন কাপড় দিয়ে নিতে হবে যেন ভেতরে কোন ময়লা বা আঁশ যেন না থাকে। তারপর সেই পরিষ্কার পানি একটি কাঁচের কন্টেনার বা বিকারে নিয়ে ৯৫ থেকে ১০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ১০ মিনিট ওয়াটার বাদে রেখে দিতে হবে।
তারপর সেই ডাবের পানির সাথে ১০০ পিপিএম ১৮ পটাশিয়াম মেটাবাইসালফইট এবং 0. 05 শতাংশ কার্বক্সিমিথাইল সেলুলোজ যোগ করতে হবে এবং খেয়াল করতে হবে কোন অবশিষ্ট অংশ যেন বোতলের তলায় পড়ে না থাকে। তারপর গরম পানিতে ফুটানো কাছের বোতলে গরম অবস্থায় থাকা অবস্থাতেই ডাবের পানি ভর্তি করে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে আপনি ডাবের পানি ছয় থেকে আট মাস সংরক্ষণ করে খেতে পারবেন।
ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। ডাবের পানি আমাদের শারীরিকভাবে পারনিশূন্যতা দূর করে থাকে। ডাবের পানি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যেমন, কিডনি, স্বাস্থ্য উন্নত করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে ইত্যাদি ধরনের উপকার করে থাকে। ডাবের পানি আমাদের শারীরিকভাবে অনেক উপকার করে থাকে। চলুন জেনে নেই ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেঃ
- ইনফেকশন দূর করতে ডাবের পানি অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসে। ডাবের পানিতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল গুণ। ডাবের পানি আমাদের ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
- নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে আমাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানিতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে।
আরো পড়ুন ঃ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ
- ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে এবং প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় আমাদের হাড়কে ভালো রাখে।
- যে সকল মানুষদের অ্যাকনের সমস্যা আছে, তারা ডাবের পানি এ নিয়মিত পান করবেন এবং ডাবের পানি একটি তুলাতে ভিজিয়ে ত্বকের উপরে ভাগে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের তৈলাক্তভাবে এবং সুস্থতা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও ডাবের শাসে যে পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে তা আমাদের কর্ম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে সেটা পড়তে দেয় না।
- অতিরিক্ত গরমের সময় শরীরের ঘেমে গেলে ঘামের সময় যত প্রয়োজনীয় পানি আছে সব শরীর থেকে বের হয়ে যায়। আবার অতিরিক্ত গরমের ফলে বমি হতে পারে এবং বমির কারণে শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়ে। ফলের কারণে আমাদের ডিহাইড্রেশন এর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডাবের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কার্বোহাইড্রেড যা আমাদের শরীরে পানি শূন্য থেকে দূর করে ।
- ডাবের পানি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে শর্করাও মিনারেল রয়েছে, যেটা আমাদের শরীরকে শীতলতা ভাবে এবং আদ্র রাখে। এই জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন সেনাদের স্যালাইনের পরিবর্তে ডাবের পানি খেতে দেওয়া হতো কারণ ডাবের পানিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার যেগুলো তাদের কর্মশক্তি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করতো।
- ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ এবং সচল রাখে। এছাড়াও ডাবের পানি আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে যার কারণে আমাদের এসিডিটির মতো সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি পান করেন তাহলে ডাবের পানিতে থাকা ফাইবার, কোষ্ঠকাঠিন্য মত রোগ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। ডাবের পানিতে রয়েছে ডাই-ইয়উরেটিক উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে ব্যাকটেরিয়াকে বিনাশ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ডাবের পানি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ কে বের করতে সাহায্য করে। এর ফলে গরমের মধ্যেও আমাদের শরীর সুস্থ এবং সতেজ থাকে।
- ডাবের পানি আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে কোন ধরনের চুল জাতীয় পদার্থ থাকে না কিন্তু ডাবের পানির একটা গুণ হলো শরীরের অতিরিক্ত চিনি শোষণ করে ফেলা। এর ফলে আমাদের ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানি যদি খাওয়া যায় তাহলে আমাদের দীর্ঘ সময় পেট ভরা মনে হয় এবং ক্ষুধা কম লাগে।
- ডাবের পানি আমাদের শরীরের নিকোটিন ও দূর করতে পারে। আপনারা যদি কেউ সিগারেট বা গাঁজা খেয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের শরীরকে ভালো রাখার জন্য আপনাদের উচিত নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়া। এতে করে আপনাদের শরীরের সব নিকোটিন দূর হয়ে যাবে এবং শরীর ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
যে কারণে আমাদের ডাবের পানি খাওয়া উচিত
শারীরিকভাবে আমাদের বাইরের সৌন্দর্যের চর্চার পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরীণ যত্নেরও প্রয়োজন। সুষম এবং পুষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের ভেতর বাইরে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই কারণে আমাদের প্রতিদিন একটি ডাবের পানি খাওয়া উচিত। দুপুরে পেট ভরে খাবার পর একটি ডাবের পানি খেলে শরীরে সুস্থতা এবং ত্বক সুন্দর হয়। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নি, যে কারণ আমাদের ডাবের পানি খাওয়া উচিতঃ
- নিয়মের মতো ডাবের পানি পান করলে যেকোনো খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে শরীরের ভেতর হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমে থাকার সুযোগই পায় না হজম শক্তির কারণে। এমনকি নিয়মিত ডাবের পানি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন ঃ হানি নাটস খাওয়ার উপকারিতা কি কি
- ডাবের পানি আমাদের পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের ত্বকের কালো দাগ বা মুখের ব্রণ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
- ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ আমাদের জন্য ভীষণ উপকারী যেমন ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
- ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের নখের ভঙ্গুরতা দূর করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার ফলে আমাদের চোখের নিচের কালো দাগ দূর করা সম্ভব। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে চোখের ফোলা ভাব দূর হয়ে যায়। ডাবে থাকা ভিটামিনের কারণে ঠোঁট ফাটা এবং ঠোঁটের কালচদাগের মতো দাগও দূর হয়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে, ডাবের পানি সংরক্ষণ করার উপায় সম্পর্কে, ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং ডাবের পানি আমাদের কেন খাওয়া উচিত এই সকল তথ্য সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদের সকল তথ্য জানার সুযোগ করে দিবেন। এরকম আরো তথ্য পেতে ওয়েবসাইট থেকে ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url