রক্ত দেওয়া কেন প্রয়োজন ও রক্ত দেওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক আপনি কি রক্ত দিতে ইচ্ছুক, কিন্তু ভয় পাচ্ছেন যে রক্ত দিলে শারীরিক অনেক ক্ষতি হবে তা ভেবে। কিন্তু না আমরা যদি নিয়মিত রক্ত দিয়ে থাকি তাহলে সেটা আমাদের জন্য শারীরিকভাবে অনেক উপকারী হবে। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই রক্ত দেওয়াতে আমাদের কি কি উপকার হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে।

এই আর্টিকেলটিতে আরো আলোচনা করা হয়েছে, রক্ত দেয়া কেন প্রয়োজন, কারা রক্ত দিতে পারবেন, এবং রক্ত দেয়ার পরের অনুভূতি এবং করনীয় কি এ সকল তথ্য সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটি থেকে সম্পূর্ণ জ্ঞান নিতে আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়া অনুরোধ রইলো।

রক্ত দেয়া কেন প্রয়োজন

উন্নত দেশের বেশিরভাগ মানুষই স্বেচ্ছায় অপমান করে থাকেন। অনেক মানুষ আছে যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রক্ত দান করে থাকেন। দরিদ্র দেশগুলোতে স্বেচ্ছায় রক্তদান করে এরকম মানুষ এর সংখ্যা খুব কম । তারা কেবল পরিচিত মানুষদের রক্ত দান করে থাকে। আবার অনেকেই আছেন যারা সমাজসেবা করার জন্য রক্ত দান করে থাকেন। অনেক রক্ত দাতা আছে যারা পেশাদার রক্তদাতা। যেসকল মানুষ সেচ্ছাই রক্ত দান করে থাকে, তারা যেন তাদের প্রয়োজনে রক্ত পেতে পারে ।


বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত, থ্যালাসেমিয়ার মত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষদের রক্তের খুবই প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই পরিমাণ রক্তদাতা আমাদের বাংলাদেশে নেই। তাই আমাদের মত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের স্বেচ্ছায় রক্তদান করা জরুরী। আমাদের দেশে পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় যে, আমাদের দেশে বছরে প্রায় ৯ থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে রক্ত যোগাড় হয় ৬ থেকে ৭ লাখ ব্যাগ।

এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রক্ত আসে স্বেচ্ছায় দানকারী রক্তদাতার কাছে থেকে। আমাদের সকলের উচিত শুধু পরিচিতদের নয় সবাইকে রক্ত দিতে হবে। নিয়ে নিজের স্বেচ্ছায় দান করুন এবং আপনার যখন প্রয়োজন হবে তখন আপনি আরেকজনের কাছে রক্ত পেয়ে যাবেন। এই সকল কারণে আমাদের রক্ত দেওয়া প্রয়োজন।

রক্ত দিলে আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হয়না। তাই আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের (১৮-৪৫) বছর সেচ্ছাই রক্ত দান করা উচিত। রক্ত দান করলে আমাদের শারীরিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আসুন জেনে নি রক্ত দিলে আমাদের কি কি উপকার হয়।

কারা রক্ত দিতে পারবে

সকল ডাক্তারের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা এবং পু্রুষ সবাই রক্ত দান করতে পারে। রক্ত দান করলে আমাদের বিভিন্ন রকমের উপকার হয়।স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ড. সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিকভাবে সুস্থ নারী ও পুরুষ রক্ত দিতে সক্ষম। রক্ত দেয়ার ক্ষেত্রে একটা পুরুষ এর ওজন ৪৮ কেজি এবং একটি মহিলার ক্ষেত্রে ৪৫ কেজি হইলে সে মহিলা এবং পুরুষ রক্ত দান করতে পারবে।


যে ব্যক্তি রক্ত দান করবেন সে সময় তার শরীরের তাপমাত্রা ৯৯.৫ ফারেনহাইট এর নিচে এবং তার নাড়ীর গতি 70 থেকে 90 এর মধ্যে আর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে হবে। পুরুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ডিসি লিটারে ১৫ গ্রাম এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ডেসি লিটারে ১৪ গ্রাম হওয়া দরকার। তবে একজন প্রাপ্য পুরুষ এবং নারী রক্ত দান করতে পারবেন। তবে রক্তদান তাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ যেমন চর্মরোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

একটি প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের শরীরে ৪ থেকে৬ ৬ লিটার রক্ত থাকে। তাই রক্তদানের সময় 450 মিলি লিটার রক্ত দেওয়ার পরও আমাদের কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। আর একজন মানুষ ৯০ দিন পর পর রক্ত দিতে পারবেন।

রক্ত দেওয়ার উপকারিতা কি

আমরা হয়তো অনেকেই ভেবে থাকি যে আমাদের শরীর থেকে আমরা রক্ত দিয়ে দিলে আমাদের শরীরে রক্ত হয়তোবা পূর্ণতা পাবে না। অথবা আমরা রক্তের অভাবে রক্ত শূন্যতা রোগে ভুগবো। এরকম কোন কিছুই হয় না আমরা যদি কাউকে রক্ত দান করে থাকি তাহলে সেটি আমাদের জন্য বড় একটি উপকার হয়। নিয়মিত রক্ত দান করলে আমাদের শারীরিকভাবে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক রক্ত দেওয়ার উপকারিতা কি কি তা সম্পর্কেঃ

  • প্রথমত একটি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
  • নিয়মিত রক্ত দান করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়, এর ফলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এর ফলে আমাদের হার্ট অ্যাটাক এবং হৃদরোগের যুক্তি কম থাকে।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে আমাদের শারীরিকভাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।
  • আপনি যদি আগে কাউকে রক্ত দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার যখন রক্তের প্রয়োজন হবে তখন ব্লাড ব্যাংক থেকে আপনাকে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
  • রক্তদানে রক্তের পরীক্ষা করার সময় হেপাটাইটিস-বি , হেপাটাইসিস-সি, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া , এইচআইভি এর মত রোগ আছে কিনা সেগুলো বিনা খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়।
  • আপনি যদি বছরে তিনবার রক্ত দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে নতুন লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে দ্রুত রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা দূর হয়ে যায়।
  • রক্তদান করলে আমাদের যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়, সেটা আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নিয়মিত রক্ত দান করলে আমাদের শরীরের নতুন রক্তের জন্ম হয়, যার কারণে আমাদের শরীর কখনো দুর্বল মনে হয় না।
  • রক্তদান আমাদের শারীরিকভাবে রক্তের উচ্চ চাপ কমায়।

প্রিয় পাঠক আপনি যদি নিয়মিত রক্তদান করেন তাহলে এই সকল উপকার গুলো আপনি পাবেন।

রক্ত দেওয়ার পরের অনুভুতি ও করণীয়

আমরা অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আছি যারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করে থাকি। আবার অনেকেই আছে যারা আমাদের রক্ত দেয়াতে তারাও আগ্রহী হয়ে রক্ত দান করা শুরু কর । অনেক মানুষ আছে যারা রক্ত দেওয়ার পরে অনেক সমস্যায় পড়ে যেমন, মাথা ঘুরে পড়ে যায়, যে হাত থেকে রক্ত নেওয়া হয় সেই হাত একটু দুর্বল মনে হয়। রক্ত দেওয়ার পর আপনার আমার এরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।

এগুলো সমস্যা যদি হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আবার সুস্থ হয়ে যাবেন। একজন নতুন রক্ত দাদা হিসেবে আপনার এই সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্ত দেওয়ার পর এরকম সমস্যা যেন না হয় সেজন্য আমাদের কিছু দিক অবলম্বন করা জরুরী। আসুন জেনে নেই রক্ত দেওয়ার পরে আমাদের করণীয় কি।

  • রক্তদানের পর লাগিয়ে দেয়া যে ব্যান্ডেজ আছে সেটা অন্তত আপনার হাতে কয়েক ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। যদি তাড়াতাড়ি খুলে ফেলেন তাহলে আপনার ওই জায়গা থেকে রক্ত বের হতে পারে।
  • রক্তদানের পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • ত্বকের রেশ ছাড়ানোর জন্য আপনার হাতের ব্যান্ডেজ খোলার পর ওই জায়গা সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন।
  • যেদিন রক্তদান করবেন ওই দিন কাজ করার সময় রক্ত দেওয়া হাত দিয়ে ভারী কোন কিছু তুলবেন না বা এক্সারসাইজ জাতীয় কোন কিছুই করবেন না।
  • যদি সুচ ফোটানো জায়গা দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে তাহলে ওই জায়গায় একটি আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে আপনার হাত উপরের দিকে তুলে রাখুন যতক্ষণ না রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে।
  • রক্ত দেওয়ার পর যদি আপনার মাথা ঘোরা বা শারীরিক অসস্তিবোধ হয় তাহলে কিছুক্ষণ বসে বসে থাকুন। এতে আপনার শরীর স্থিরতা বোধ করবে এবং সুস্থ হয়ে যাবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে, কেন রক্ত দেয়া প্রয়োজন, কারা রক্ত দিতে পারবে, রক্ত দেওয়ার উপকারিতা কি এবং রক্ত দেওয়ার পর অনুভূতি এবং করণীয় কি এই সকল তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় পাঠক আশা করি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url