গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত - গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়
পুষ্টিকর খাবার একটি গর্ভবতী মহিলার শারীরিক উন্নতি ঘটায়। কিন্তু আপনি জানেন না গর্ভবতী অবস্থায় কোন কোন খাবার মেয়েদের শারীরিক উন্নতি ঘটায়। প্রিয় পাঠক চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় মেয়েদের কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত।
এছাড়াও আরো জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়, গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয় এবং গর্ভবতী মহিলার জন্য কিভাবে খাবার প্রস্তুত করতে হয়। এই সকল তথ্য সম্পূর্ণ জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয়
নতুন একটি প্রাণের জন্য দেয়ার জন্য একটি নারী নয় মাসের অধিক সময় ধরে তার গর্ভে একজনকে বহন করেন । ছোট্ট একটু রক্তবিন্দু থেকে হৃৎপিণ্ড, হাত, পা, মস্তিষ্ক, ইত্যাদি তৈরি হয়ে একটি প্রাণের জন্ম হয়। নিজের শরীরের মধ্যে একটি প্রাণ বহন করার কারণে শরীরে নানান ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। প্রথম তিন মাস তেমন শারীরিক কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। কিন্তু তিন মাসের পর থেকে সেই পরিবর্তনগুলো চোখে ধরার মতো হয়ে ওঠে। প্রিয় পাঠক আসন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় মেয়েদের কি কি সমস্যা হয়।
- গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীরের হাড়ের সংযোগ স্থাপন করা জায়গা গুলো ঢিলা হয়ে যায়। হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা করে।
- পেট অতিরিক্ত ভারি হওয়ার কারণে সবার সময় পিঠে চাপ পড়ে বেশি। এই কারণে পিঠ ব্যথা হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় মেয়েদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। যাকে আমরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলি। সন্তান জন্ম দেয়ার পর এটি চলে যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশি থাকে।
- জরায়ু আকারে বড় হতে শুরু করে । এর কারণে মূত্রথলিতে চাপ পরে বেশি যার কারণে বারবার প্রস্রাব হয়।
- গর্ভাবস্থায় মেয়েদের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং ব্রাশ করার সময় রক্ত বার হয় এবং ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- জরায়ু অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ফুসফুস পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রসারিত হয় না, তাই গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
- রক্তের শূন্যতা দেখা দেয় যার কারণে শরীরে আয়রনের চাহিদা বাড়তেই থাকে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মেয়েদের রক্তচাপ বেশি থাকে।
- হরমোনের কারণে গর্ভাবস্থায় মেয়েদের স্তন বড় হয়ে যায় এবং স্তনের আশেপাশে কালো হয়ে যায়।
- যৌন মিলনের আগ্রহ একদম কমে যেতে পারে আবার বেড়েও যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সকল মেয়েদের ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা দেখা দেয় না কিন্তু গর্ভাবস্থায় মেয়েদের এই সকল সমস্যা হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শারীরিক অনেক পরিবর্তন ঘটে থাকে। শারীরিকভাবে পরিবর্তন ঘটার ফলে মেয়েদের শারীরিকভাবে অনেক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। এরকম গর্ব অবস্থায় যেন কোন মেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল না হয় সেই দিকে খেয়াল রেখে কিছু খাবার খাওয়া উচিত। যেগুলো শারীরিকভাবে মেয়েদের উন্নতি ঘটায়। তাই আসুন জেনে নি গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত।
- ভিটামিন যুক্ত খাবারঃ গরুর মাংস, কলিজা, পনির ইত্যাদি জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে হবে না। তাই গর্ভাবস্থায় মেয়েদের খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিটামিন বি যুক্ত খাবার কম না হয়। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের দুধ ও দই খেতে হবে।
- আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবারঃ আপনার সন্তানের মানসিকভাবে অনেক বিকাশ করবে। তাই গর্ব অবস্থায় মেয়েদের আয়োডিনযুক্ত খাবারের অভ্যাস করতে হবে যেমন সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, গলদা চিংড়ি। ইত্যাদি
- কপার ও জিংক ঃ গর্ভাবস্থায় খাবারের তালিকায় কপার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন কাজুবাদাম, মটরশুঁটি, অ্যাভোকাডো, বিন, বিট ইত্যাদি। আর জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে ছোলা , গরুর মাংস ইত্যাদি।
- কোলিন যুক্ত খাবারঃ ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে কলিং পাওয়া যায়। কোলিন গর্ভাবস্থায় মেয়েদের গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- আইরন ও ফলিক এসিডঃ কলা, পুদিনা পাতা, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড এবং আইরন পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় মেয়েরা নিয়মিত এগুলো খাবার খেলে তার নিজের শারীরিক বিকাশও ঘটবে এবং গর্ভে থাকা সন্তানের বিকাশে ঘটবে।
- প্রোটিন যুক্ত খাবারঃ প্রয়োজনযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বিন্স, পাঁচমিশালী ডাউল, ইত্যাদি খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আপনার শারীরিকভাবে অনেক উন্নতি হবে।
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, গাজর, বিন্স, টমেটো ইত্যাদি খাবার গুলো প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রেখে দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় এই সকল খাবার গুলো আপনার শরীর ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়
অনেক রকম খাবার আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। আবার অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার অনেক ঝুঁকি থাকে। ওই সকল খাবার গুলো গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যায় গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়।
- মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খাওয়া উচিত নয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আপনার শরীরকে অসুস্থ করে ফেলবে।
- কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত নয় কারণ এতে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া থাকে। এটি আমাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারে
- রান্না না করা মাছ খাওয়া উচিত নয়।
- কাঁচা বা ফেটে যাওয়া দুধ ও এরকম ধরনের দুধ থেকে তৈরি যেকোন কোমল পানিও খাওয়া উচিত নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে।
- পুরোপুরি রান্না না করা মাংস বা কাঁচা মাংস খাওয়া উচিত নয়। এগুলোতে টেক্সোপ্লাজমা গণ্ডির মত পরজীবী এবং লিস্টরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যা গর্ভবতী মেয়েদের শরীর অসুস্থ করতে সক্ষম।
- মার্কারি জাতীয় খাবারের থেকে দূরে থাকতে হবে।
- লিভার বা অন্যান্য অংশের মাংস খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ থাকে যার ফলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভবতী মেয়েদের জন্য কিভাবে খাবার প্রস্তুত করতে হয়
গর্ভবতী অবস্থায় মেয়েদের শরীরে অনেক রকম পরিবর্তন ঘটে থাকে। তার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য তাকে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে যেগুলো তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। তার জন্য খাবার প্রস্তুত করতে হলে কি কি করা উচিত তা আগে জেনে নিন। গর্ভবতী মেয়েদের জন্য কিভাবে খাবার প্রস্তুত করতে হয় জেনে নিন।
- প্রত্যেকটি খাবার খাওয়ার আগেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- যেসব পাত্র খাবারের জন্য ব্যবহার করবেন সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
- মাছ বা মাংস পুরোপুরি রান্না করতে হবে। তাছাড়া পুরোপুরি রান্না না হলে মাংস হয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষতি হতে পারে।
- ফলমূল ও শালাদের সবজিগুলো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং সবুজ শাকসবজি গুলো পুরোপুরি রান্না করতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ তাপমাত্রায় খাবার সংগ্রহ করতে হবে যেন খাবার নষ্ট না হয়।
- রান্না করার পরপরই গরম গরম খাবার খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। গর্ব অবস্থায় শারীরিক উন্নতি ঘটবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে, গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয়, গর্ভাবস্থায় কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত, গর্ভাবস্থায় কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় এবং গর্ভবতী মেয়েদের জন্য কিভাবে খাবার প্রস্তুত করতে হয় এই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের জবাবটি পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url