লাল তরমুজ চেনার উপায় ও তরমুজের উপকারিতা

গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে তোর মত আমাদের সকলেরই প্রিয়। কিন্তু আমরা আসলেও কি পরিপক্ক পাকা তরমুজ ক্রয় করে থাকি? আমরা অনেকেই সঠিকভাবে লাল তরমুজ চেনার উপায় সম্পর্কে জানেনা। যে সকল মানুষ সঠিকভাবে লাল তরমুজ চিনতে পারেন না এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য। আর্টিকেলটিতে লাল তরমুজ চেনার উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে।
লাল তরমুজ চেনার উপায় ও তরমুজের উপকারিতা

এছাড়াও এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে তরমুজের পুষ্টি গুনাগুন, তরমুজের উপকার ও ত্বকের যত্নের তরমুজের ব্যবহার সম্পর্কে। এই সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

তরমুজ একটি ফার্সি শব্দ, এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus lanatus। তরমুজ হল একটি গ্রীষ্মকালীন খুবই সুস্বাদু ফল। সারা বিশ্বেই গ্রীষ্মকাল শুরু হলেই তরমুজ কেনাবেচার হিড়িক বেধে যায়। গ্রীষ্মকালেই তরমুজের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি কারণ তরমুজের মধ্যে রয়েছে 6 শতাংশ চিনি এবং 92 শতাংশ পানি আর বাকি ২% হলো অন্যান্য উপাদান। এই তরমুজ হলো একটি ভিটামিন এ জাতীয় ফল। সারা বিশ্বেই তরমুজের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। 

তবে এর উৎপত্তি ইতিহাস নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। গবেষকদের মতে তরমুজের প্রায় ১০০০ প্রজাতি রয়েছে। একটি তরমুজের প্রায় সব অংশই খাওয়া যায় কিন্তু এটি আগের যুগের মানুষেরা রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করে আসতো। তরমুজের জন্ম যেখানেই হোক বিতর্ক থাকুক তরমুজ একটি উপকারী জাতীয় ফল। তরমুজ খাওয়ায় অনেক উপকার রয়েছে।

লাল তরমুজ চেনার উপায়

গ্রীষ্মকালে প্রতিটা মানুষই তরমুজ খেয়ে থাকি। কিন্তু তরমুজ কিনতে যাওয়ার সময় আমরা সঠিক তরমুজ চিনতে পারিনা। ব্যবসায়ীদের উপর বিশ্বাস করে আমরা তরমুজ নিয়ে থাকি। কিন্তু কিন্তু আমরা যদি একটু সতর্ক হয়ে যাচাই-বাছাই করে বা কৌশলে তরমুজ কিনে থাকি তাহলে অবশ্যই লাল এবং রসালো ও মিষ্টি তরমুজ কিনতে পারবো। তাই আসুন ব্যবসায়ীর হাতে তরমুজের ভালো মন্দ ছেড়ে না দিয়ে নিজের দক্ষতা দিয়ে যাচাই বাছাই করে তরমুজ ক্রয় করি। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক লাল তরমু চেনার উপায় সম্পর্কে।

  • প্রথমত আপনি কিন্তু তরমুজ হাতে নেবেন তারপর দেখবেন ওজন কতটুকু। যদি সাইজের থেকে ওজন তুলনামূলক একটু বেশি হয় তাহলে ভাবতে হবে তরমুজের ভেতর অনেক রস হয়ে গেছে। আর যদি ওজন কম মনে হয় তাহলে ভাববেন ভেতরে ফাঁপা আছে এবং সেটা ঠিকমতো পাকার আগেই বাজারে চলে এসেছে।

  • বাহিরের রং চকচকে এরকম তরমুজ না কেনাই ভালো। কারণ চকচকে রং এর মানে হলো তরমুজটি অপরিপক্ক। তরমুজ কিনুন একটু ফ্যাকাসে রং দেখে। তাহলে সেটা পরিপক্ক পাকা তরমুজ হবে।আর তরমুজটি দেখতে যদি সাদা রঙের মতো হয়ে থাকে তাহলে ভাবতে হবে পাকার আগে তরমুজটি উঠানো হয়েছে। আর এই সাদা অংশ যদি একটু হলদে ভাব ধারণ করে বা হলুদ হয়ে যায় তাহলে ওই তরমুজটি অনেকটাই লাল হবে।
  • তরমুজের বোটার অংশ দেখে আপনি পাকা তরমুজ চিনতে পারবেন। টাকা তো মোদের বোটার অংশ বাদামী কালারের হয়ে থাকে এবং তরমুজটি অতিরিক্ত পেকে গেলে তরমুজের বোটা খসে পড়ে যেতে পারে। আর অপরিপক্ক তরমুজের বোটা সবসময় সবুজ হয়ে থাকে।
  • অনেকে দক্ষ ক্রেতারা আছে যারা তরমুজ ক্রয় করার সময় তরমুজের গায়ে আঘাত করে শব্দের মাধ্যমে বুঝে নিতে পারে তরমুজটি পরিপক্ক নাকি অপরিপক্ক। অপরিপক্ক তরমুজের গায়ে যদি আঘাত করা যায় তাহলে শব্দটি ট্যাপ ট্যাপ এর মত হয়। আর যদি তরমুজটি পরিপক্ক পাকা এবং লাল হয় তাহলে শব্দটি ড্যাপ ড্যাপ হয়।
  • পাকা তরমুজের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো চাপ দিলে একটু দেবে যাওয়া। একটি পরিপক্ক পাকা তরমুজ যখন আপনি হাতে নিয়ে হালকা করে চাপ দিবেন, তখন তরমুজটি হালকা করে ভিতরের দিকে দেবে যাবে কারণ এর ভিতরে থাকা রস বা পানির পরিমাণ অনেকটাই বেশি এবং পাকা এজন্য। আর তরমুজ টি চাপ দেওয়ার পরেও যদি একটুও না যাবে বা খুবই শক্ত দেখা যায় তাহলে ভাবতে হবে তরমুজটি পরিপূর্ণ হয়ে পাকা নয়। সেই তরমুজটির লাল হওয়ার সম্ভাবনা ও কম।
  • তরমুজ যদি মানুষের দ্বারা পাকানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে তরমুজের গায়ে অবশ্যই ইনজেকশনের ফুটোর চিহ্ন থাকবে। কারণ যারা কৃত্রিমভাবে তরমুজ পাকায় তারা ইনজেকশনের মাধ্যমে তরমুজের শরীরে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল প্রবেশ করায়। তো আপনি যখন তরমুজ কিনবেন তখন অবশ্যই দেখে কিনবেন যেন তরমুজের গায়ে কোন ফুটো না থাকে।
  • আপনি যদি চেষ্টা করেন তাহলে তরমুজের গন্ধ থেকেও আপনি তরমুজ কিনতে পারবেন। কারণ একটি পারিপক্ক তরমুজের গন্ধ অনেকটা মিষ্টি গন্ধ বের হয়। যদি বেশি মিষ্টি গন্ধ বের হয় তাহলে কেনার দরকার নাই। কারণ অতিরিক্ত পাকা তরমুজ থেকেই এরকম অতিরিক্ত মিষ্টি গন্ধ বের হয়। আবার যে সকল তরমুজ থেকে কোন গন্ধ বের হয় না সেগুলো কেনা থেকেও বিরত থাকুন কারণ সেগুলো পাকা তরমুজ নয়। তাই যে সকল তরমুজ থেকে মোটামুটি মিষ্টি গন্ধ বের হচ্ছে সেগুলো কিনুন।
  • তরমুজের আকৃতি দেখেও তরমুজ চেনা যায়। যে তরমুজটি দেখতে পুরোপুরি সমান সেই তরমুজটি পাকা এবং লাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এরকম দেখে তরমুজ কিনতে পারেন।

তরমুজের পুষ্টি গুনাগুন

গ্রীষ্মকালীন সময়ে তরমুজ আমাদের অনেক প্রিয় ফল হয়ে ওঠে কারণ তরমুজের ভেতর প্রায় ৯২ ভাগই পানি থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময় আমাদের দেহের পানির চাহিদা মেটাতে এবং আমাদের দেহকে সুস্থ সবল রাখতে তরমুজের গুরুত্ব অপরিসীম। তরমুজে আরো অনেক ধরনের উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম উপকার করে থাকে। প্রিয় পাঠক জেনে নিন তরমুজের মধ্যে কি কি পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে।

যেমনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তরমুজে রয়েছে পানি- ৯২ থেকে ৯৫ গ্রাম, আঁশ ০.২ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালোরি ১৫ থেকে ১৬ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মি.গ্রাম, আয়রণ ৭.৯ মি.গ্রাম, কার্বহাইড্রেট ৩.৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম। তাছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি-২ রয়েছে।

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা

তরমুজ এমন একটি ফল যা আমরা ছোট-বড় সকল ধরনের মানুষেরাই পছন্দ করে থাকে। গ্রীষ্মকালে তরমুজ আমাদের ভীষণ উপকার করে থাকে। গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীরের পানির চাহিদা মিটাতে তরমুজ অন্যতম ভূমিকা পালন করে। পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তরমুজ আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। আসলে জেনে নেওয়া যাক তরমুজ আমাদের কি কি উপকার করে।

  • হার্টের সুস্থতাঃ তরমুজের মধ্যে উপস্থিত রয়েছে সিট্রোলিন , এই উপাদানটি আমাদের হাটের জন্য খুবই ভালো। তরমুজ আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এর ফলে আমাদের হার্টের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

  • শরীরকে আর্দ্র রাখেঃ তরমুজের মধ্যে প্রায় ৯২ ভাগই পানি থাকে। যা আমাদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। এভাবেই তরমুজ আমাদের শরীরকে আদ্র রাখে।
  • হজম শক্তি বাড়ায়ঃ তরমুজে ফাইবার জাতীয় উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আর তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকার কারণে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য হয়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেঃ তরমুজের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে লাইকোপেন। আর এই লাইকোপেনই ক্যান্সার এর প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেনের কারণে তরমুজের রং লাল হয়ে থাকে। আর তরমুজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ করেঃ তরমুজের মধ্যে বিদ্যমান লাইকোপেন আমাদের চোখের অনেক উপকারে আসে। বয়সজনিত কারণে তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে তারা নিয়মিত তরমুজ খেতে পারেন এতে আপনাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ করবে।
  • পেশির ব্যথা কমায়ঃ তরমুজে বিদ্যমান অ্যামাইনো অ্যাসিড সিট্রুলিন আমাদের পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও তরমুজের মধ্যে ভিটামিন বি৬ আছে যা আমাদের অ্যান্টিবডি তৈরি করতে প্রচুর ভূমিকা পালন করে। এন্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে আমাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ সঠিক থাকে।

ত্বকের যত্নে তরমুজ ব্যবহারের নিয়ম

আমাদের মাঝে অনেক মানুষ রয়েছে যারা জানে না যে তরমুজ দিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। অনেকে আছে যারা জানে কিন্তু সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারবে না। তরমুজ আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তরমুজে থাকা পানির কারণে তরমুজ ত্বকের জন্য অনেক উপকারী হয়ে উঠেছে। ত্বকের উপর কিভাবে তরমুজ ব্যবহার করব তা সঠিকভাবে জানি না। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে না যাক ত্বকের যত্নে তরমুজ ব্যবহারের নিয়ম।
  • তরমুজের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে ম্যালিক এসিড। এসিড আপনার ত্বকের মৃত কোষ কে সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তাই আপনি তরমুজকে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

  • তরমুজ নিয়ে প্রথমত তরমুজের পেস্ট বানান তারপর সে পেস্টের সাথে কিছুটা গোলাপজল মিশিয়ে নিন এবং সেটা আপনার মুখে মাস্কের মতো লাগিয়ে রাখুন। এটা লাগানোর পর ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর আপনার মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক কিছু উজ্জ্বল এবং মসৃণ হয়েছে।
  • এছাড়াও তরমুজ দিয়ে বিভিন্ন রকম ভাবে ত্বকের চর্চা করা যায়। তরমুজের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানানো যায়। আপনি মুখে ব্যবহার করার পরে আপনার ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ হবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আমরা সকল মানুষেরাই গ্রীষ্মকালে তরমুজ খেয়ে থাকি। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে পাকা তরমুজের চেয়ে আমরা কৃত্রিম ভাবে পাকা তরমুজই বাজারে বেশি দেখে থাকি। নকল পণ্য হইতে সাবধান , তাই আপনাকে তরমুজ কেনার সময় বিভিন্ন রকম সাবধানতা অবলম্বন করে তরমুজ কিনতে হবে। এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে , লাল তরমুজ চেনার উপায়, তরমুজের পুষ্টিগণ আগুন ও তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রিয় পাঠক আশা করি এই পোস্টটি পড়ার তরমুজ ক্রয় করতে গেলে আপনি কোন সময় ঠকবেন না। আপনাদের আশেপাশের মানুষদের মধ্যে যারা তরমুজ সঠিকভাবে ক্রয় করতে পারেনা তাদের কাছে এই সকল তথ্য শেয়ার করতে পারেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url