বনসাই করার জন্য উপযুক্ত গাছ ও মাটি তৈরির পদ্ধতি
আপনি কি আপনার বাড়ির বাগানের সুন্দর্য বাড়ানোর জন্য বনসাই এর চাষ করতে চান ? কিন্তু আপনি কোন গাছ দিয়ে বনসাই বানাবেন সেটা জানেন না। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য । এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে , বনসাই করার জন্য উপযুক্ত গাছ সম্পর্কে।
এছাড়াও আলোচনা করা হয়েছে , বনসাই এর ইতিহাস , বনসাই এর জন্য মাটি তৈরি ও বনসাই এর চারা সংগ্রহ সম্পর্কে । এই বিষয়ে সকল তথ্য জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
বনসাই হল একটি জাপানি শব্দ। বংশের অর্থ হলো পাত্রের মধ্যে গাছ। বনসাই শব্দটি মূলত চীনা শব্দ পুন-সাই বা পেনজিং থেকে এসেছে। বনসাই গাছগুলো একটি পাত্রের ভেতরে বড় করা হয়। বনসাই গাছগুলো প্রকৃতির একটি ক্ষুদ্র আকৃতির গাছ উপস্থাপনা করার উদ্দেশ্যে করা হয়। বিশাল বিশাল শ্রেণীর গাছকে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতিতে পাথরে লালন পালন করাটাই হলো বনসাই।
বনসাই এর ইতিহাস
মিশরীয় সভ্যতায় টবে গাছ লাগানোর বা বিভিন্ন ধরনের চারা উৎপাদনের কথা জানা যায়। ৪০০০ খ্রিষ্ট পূর্বে পাথর কেটে পাত্র তৈরি করে সেটাতে গাছ চাষ করার হাদিস পাওয়া যায়। প্রচুর মন্দিরে ফারাও তৃতীয় রামেসেস পাত্রী লাগানো খেজুর এবং জলপাই য়ের ও অন্যান্য গাছের বাগান দান করেছিলেন। প্রাচীনকালে ভারতের ঔষধ আর খাবারের জন্য টবে বা পাত্রে গাছ লাগানোর প্রচলন ছিল। ২৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৪২০ খ্রিস্টাব্দের সময় মধ্যবর্তী চীন সাম্রাজ্যের লেখা লিখতে প্রথমে বনসাই শব্দটির পরিবর্তে পেনজাই শব্দটি ব্যবহার করা হতো।
আরো পড়ুন ঃ কাঁচা হলুদ ব্যবহারে মানব দেহে কি কি উপকার হয়
তারপর ধীরে ধীরে চিন থেকে শুরু করে জাপানে, কোরিয়াতে এবং ভিয়েতনামে বিভিন্ন ধরনের বনসায়ের চর্চা করা হয়। চৈনিক ছং রাজবংশের সময় থেকে জাপানে পাত্রে উৎপাদিত গাছের জনপ্রিয়তা পায়। পাত্রের এই ক্ষুদ্র গাছকে একসময় গামলার গাছ বলা হত। কোকান শিরিনের লেখা ক্ষুদ্রাকৃতির বাগান নিয়ে লেখা গদ্য বইয়ে বনসায়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বাগান বানানোর পরিকল্পনার আলোচনা করা হয়েছিল।
প্রথম প্রথম জাপানিরা এই গাছগুলোকে বাড়িকে সাজানোর কাজে ব্যবহার করত। সেই সময় ধনীদের অবসরে বিনোদনের জন্য আজালিয়া এবং ম্যাপলের মতো গাছকে বনসাই বানানো হতো। ১৮ সালের দিকে জাপানিরা কম গভীর পাত্রে এসব ক্ষুদ্র গাছ লালন-পালন শুরু করে এবং পেন যায় শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তন করে বনসাই রাখা হয়। এখনো টোকিও রাজশিক প্রাসাদে থাকা অনেক পুরনো বনসাইকে জাপানের জাতীয় সম্পদ হিসেবে ধরা হয়।
বনসাই করার জন্য উপযুক্ত গাছ
যে সকল কাজগুলো পাত্রে থাকা অবস্থায় খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হয়, গাছের কান্ডগুলো মোটা হয়, বছরে একবার পাতা ঝরে যায়, গাছের বয়স বেশি হয়ে গেলে গাছের ছাল গুলো মোটা হয়ে যায়। গাছের ঝুড়ি নামে এমন গাছ এবং শিকড় কেটে দিলে ঝুরি গাছের শিকড়ের কাজ করে এগুলোকে বনসাই বলা হয়ে থাকে। বনসাই মূলত ছোট ছোট পাত্রী করা হয়ে থাকে। এই গাছগুলো গাছের বয়স অনুযায়ী বেঁচে থাকে। আর একটি ভালো বনসাই চাষ করার জন্য আবহাওয়া ভালো হওয়া খুবই জরুরী। তাই আসুন জেনে নিই আমাদের দেশে কোন কোন গাছগুলো বনসায়ের উপযোগী। আসুন জেনে নি বনসাই এর উপযুক্ত গাছ সম্পর্কেঃ
- বট
- বকুল
- শিমুল
- পাকুড়
- তেঁতুল
- শিরিষ
- বাবলা
- পলাশ
- বিলিতি বেল
- ছাতিম
- হিজল
- জাম
- নিম
- বেলি
- গাব
- শেফালী
- পেয়ারা
- হেওরা
- ডালিম
- তমাল
- জাম্বুরা
- কমলা
- তুলসী
- বহেরা
- বরই
- বর্ডার
- কামিনী
- মেহেদী
- কড়ই
- অর্জুন
- জারুল
- জুনিপার
- নরশিংধ
- করমচা
- লুকলুকি
- কৃষ্ণচূড়া
- কদবেল
- দেবদারু
- সাইকেশ
- হরিতকি
- কামরাঙা
- আমলকি
- নীল জবা
- লাল জবা
- কুসুমফুল
- এশফেরা
- অশ্বথ বট
- নুডা বট
- পাকুর বট
- কাঠলি বট
- রঙ্গন ছোট
- রঙ্গন বড়
- নিম সুন্দরী
- লাল গোলাপ
- খই বাবলা
- কনকচাঁপা
- গোলাপজাম
- সাদা নয়নতারা
- স্টার কুইন
- বাগান বিলাস
- হেলিকুনিয়া
- গোলাপিটা ফুল
- পান বিলাস
- লালা পাতাবাহার
- লাল জামরুল
- চায়না বাঁশ
- সন্ধ্যা মালতী হলুদ
- যজ্ঞ ডুমুর
- আলমন্ডা
- এলাচি
উপরোক্ত এই সকল গাছগুলো আপনি আমাদের দেশ বাংলাদেশ বনসাই হিসেবে চাষ করতে পারবেন। এগুলো গাছের জন্য আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়া একদম পারফেক্ট।
বনসাই এর জন্য মাটি তৈরি
বনসাই মূলত চাষ করা হয় মাটির তৈরি কোন পাত্রের ভিতরে বা টবের ভিতরে। টবের বাহিরে কোন গাছ চাষ করার জন্য যেকোনো ধরনের মাটি হলে হয় কারণ খোলা মাটিতে বিভিন্ন ধরনের জৈব সার এবং গাছের বৃদ্ধি করার পদার্থ থাকে। কিন্তু মাটি টপ বা মাটির পাত্রে এরকম কোন সুবিধা থাকে না । তাই বনসাই চাষ করার জন্য আমাদের দো-আশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগি। তাই মাটির পাত্রে দো-আশ নিতে হবে ।
আরো পড়ুনঃ হানি নাটস খাওয়ার উপকারিতা কি কি
এছাড়া মাটির সাথে কম্পোস্ট সার, ইটের গুড়া , বালি , পাথর এর গুড়ো, পোড়ামাটির গুড়া এবং ছাই মেশাতে হবে । এতে করে মাটিটা অনেক ভাল হবে গাছ তাড়তাড়ি বৃদ্ধি হবে । যদি সম্ভব হয় তাহলে কেচো সার আর গোবর সার মেশাতে হবে । তাহলে মাটি উরর্বর হবে । মাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি হলে সেটা যেন একাই নিষ্কাশন হয়ে যায়।
বনসাই এর চারা সংগ্রহ
বনসাই বানানোর জন্য বনসাই এর চারা , একটি গাছের যেকোন অংশ কেটে নিয়ে বনসাই এর চারা রোপণ করা হয়। যেকোন গাছের বীজ থেকেও বনসাই বানানো যায়। আবার বিভিন্ন গাছের কলম থেকেও বনসাই এর চারা রোপণ করা যায়। একটি গাছের কলমের মধ্যে কাটিং,লেয়ারিং,এয়ার লেয়ারিং ইত্যাদি উপায়ে বিভিন্ন বনসাই এর চারা সংগ্রহ করা যায়। নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে তবে লাগানো যায়। আবার পুরাতন দেয়ালে বা পুরাতন ইটের স্তুপ থেকেও বট, পাকুড়, অশ্বত্থ গাছের চারা সংগ্রহ করা যায়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে , বনসাই এর ইতিহাস সম্পর্কে , বনসাই করার জন্য উপযুক্ত গাছ , বনসাই এর জন্য মাটি তৈরি, বনসাই এর চারা সংগ্রহ সম্পর্কে। আশা করি তথ্যগুলো আপনার কাছে ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করা জানাবেন এবং আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন । ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url