রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
রক্তশূন্যতা আসলে কোন রোগ নয়, এটি কোন একটি রোগের উপসর্গ মাত্র। আপনি যদি রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটিতে আপনার জন্য। আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে রক্ত শূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
এই আর্টিকেলটিতে আরো আলোচনা করা হয়েছে, রক্তশূন্যতার কারণ কি কি, রক্তশূন্যতার লক্ষণ কি কি ও রক্তশূন্যতার ঔষধ সম্পর্কে। এই সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটির সাথে থাকুন।
ভুমিকা
রক্তশূন্যতে এমন এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম থাকে। যার ফলে আমাদের রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমে যায়। মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামে একটি পদার্থ থাকে, এই হিমোগ্লোবিন যখন বয়স বা লিঙ্গ ভেদের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় এর মাত্রা অনেক নিচে নেমে যায় তখন তাকে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলে।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম/ ১০০ মিলি। আর প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে রক্ত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হলো ১১.৫ থেকে ১৫.৫ গ্রাম /১০০ মিলি। প্রিয় পাঠক আসুন আমরা জেনে নিয়ে রক্তশূন্যতার কারন কি কি।
রক্তশূন্যতার কারন কি
রক্তশূন্যতা আমাদের বিভিন্ন রকম ভাবে হয়ে থাকতে পারে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এবং রক্ত কণিকা একই পরিমাণ উৎপাদন হলে আমাদের রক্তের কোন শূন্যতা থাকবে না। কিন্তু কোন একটি মানুষ এক্সিডেন্ট করার পরেও তার রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আরো বিভিন্ন কারনে রক্তশূন্যতা হয় যেমনঃ
- আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- রক্তের লোহিত রক্ত কণিতা ভেঙ্গে গেলেও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন কিডনি ফেইলিওর, লিভার ফেইলিওর , থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যার কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- আর্থ্রাইটিস ও যক্ষার কারণে রক্ত শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- হিমোগ্লোবিনের নিজস্ব রোগ থেকে যেমন থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগ থেকে রক্তশূন্যতা হয়।
- কৃমির সংক্রমণ ও পাইলসের কারণে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
ইত্যাদি এই সকল কারণে একটি মানুষের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের এই সকল রোগ থেকে দূরে থাকা উচিত।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ কি কি
প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমরা রক্তশূন্যতার কারণ সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু আমরা রক্তশূন্যতার লক্ষণ জানতে না পারলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যাবে। তাই এই জটিল রোগের সহজ সমাধান পেতে আমাদের অবশ্যই এই রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলো জেনে রাখা জরুরী। প্রিয় পাঠক আসুন রক্তশূন্যতার লক্ষণ কি কিঃ
- শরীরের রক্তশূন্যতা হলে ত্বক ফেকাশে হয়ে যেতে শুরু করে। এছাড়া রক্তের শূন্যতা দেখা দিলে চোখের ভেতরের মাংসপেশিগুলো আস্তে আস্তে লাল রং হারিয়ে ফেলে।
আরো পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সমূহ
- আমাদের রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের অক্সিজেন পরিবহন করে। তাই রক্তদি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় তাহলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিবে। যার ফলে আমরা খুব সহজে হাপিয়ে পড়ব এবং অনেক সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিবে।
- রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবসময় বিষন্ন দেখা যায়। কারণ রক্তশূন্য তাহলে সব সময় শরীরের দুর্বলতা ভাব হয় এবং মাথা ব্যথা বেশি হয়।
- রক্তশূন্যতার আরেকটি লক্ষণ হলো খুব তাড়াতাড়ি হৃদপিন্ডের কম্পন বেড়ে যায়। আমাদের হৃদপিণ্ড রক্তশূন্যতার কারণে আমাদের শরীরে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না তাই আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।
- শরীরে আয়রন কমে গেলে চুল পড়া বেড়ে যায়। আর এই আয়রন কমে যাওয়ায় হল রক্তশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ। তাই যাতে চুল বেশি পড়ে তাদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়
- অনেক সময় আমাদের হাত পা প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা হয়ে থাকে। এই ঠান্ডা হয়ে থাকা একটা রক্তশূন্যতার লক্ষণ। এভাবে হঠাৎ হাত-পা প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- আমাদের শরীরে রক্তের পশুর শূন্যতা দেখা দিলে আমাদের ঠোঁটের কোনে ছোট ছোট হত হয়, জিহ্বাই ঘা হয়, চুলের ও উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। চুল ও নখ ফেটে যায়।
- রক্তস্বল্পতায় যেসব নারীরা ভুগেন তাদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়।
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, কি কারণে রক্তশূন্যতা হয় এবং রক্তশূন্যতার লক্ষণ কি কি। রক্তশূন্যতা আসলে একটি জটিল রোগ। রক্তশূন্যতার লক্ষণ যদি আমাদের মাঝে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিন্তু যারা প্রাকৃতিক ঔষধে বিশ্বাসী তারা ঘরোয়া ভাবে রক্তশূন্যতা দূর করতে পারেন। ওষুধের পরিবর্তে প্রাকৃতিক কিছু খাবারের কারণে রক্তশূন্যতা খুব সহজে দূর হয়ে যেতে পারে। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কেঃ
- পালং শাকঃ পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ , ভিটামিন বি, ভিটামিন সি , বিটা কার্টিন এবং আয়রন রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি করতে কার্যকরী। আধা কাপ পালং শাকে ৩.২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা একটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ২০% আয়রন পূরণ করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ চর্ম রোগের চিকিৎসা কি কি
- বিটঃ বিট হলো একটি আয়ন সমৃদ্ধ খাবার। এটি আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে এবং রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার কারণে আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সমপরিমাণ সচল থাকে।
- টমেটোঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আমাদের খাওয়া অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন চুষে নিতে সক্ষম। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ফাইবার , ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন নিয়মিত দুই থেকে তিনটা টমেটো খেলে আমাদের রক্তশূন্যতা দূর হয়ে যাবে।
- ডালিমঃ ডালিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং আয়রন থাকে। প্রতিদিন নিয়মিত ডালিম খেলে আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহ সচল থাকে এবং ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যায়। ডালিম খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তশূন্যতা দূর হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস ডালিমের রস খাওয়া।
- চিনা বাদাম ও পিনাট বাটারঃ আয়রনের অন্যতম একটি উৎস হল পিনের বাটার। ২ টেবিল চামচ বাটারে 0.6 মিলিগ্রাম আইরন থাকে। এটি আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। আপনার যদি পিনাট বাটার খেতে পছন্দ না করেন তাহলে চিনা বাদাম খেতে পারেন। এটি আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতার ওষুধ
আমরা ইতিমধ্যে রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে রক্তশূন্যতার দূর না হলে আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার যদি রক্তশূন্যতা নিয়ে অন্য কোন রোগের সন্দেহ হয় তাহলে সেটা পরীক্ষা করাতে হবে। সে অনুযায়ী ডাক্তারের থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। রক্তশূন্যতা আসলে এটা কোন রোগ নয়, এটি কোন একটি রোগের উপসর্গ হতে পারে। তাই রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
রক্তশূন্যতা পরীক্ষা করার পরে সে অনুযায়ী ডাক্তারের থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তার আপনাকে যেসব ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল দিবেন সেগুলো আপনি নির্ভয় খেতে পারেন। আর আপনার যদি রক্তশূন্যতা নিয়ে গুরুতর কোন সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তার আপনাকে ইনজেকশন দিতে পারে। প্রিয় পাঠক আশা করি বুঝতে পেরেছেন রক্তশূন্যতার ওষুধ সম্পর্কে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে রক্তশূন্যতার কারণ কি কি , রক্তশূন্যতার লক্ষণ কি কি , রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় ও রক্তশূন্যতার ওষুধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তরটি পেয়ে গেছেন। এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা সকল তথ্য যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url