ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম- ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই জানি যে , ইসবগুলের ভুসি আমাদের অনেক উপকার করে থাকে । কিন্তু কোন নিয়মে খেলে কতটুকু উপকার পাওয়া যাই তা জানিনা । আসুন জেনে নি , ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম ও ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম- ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা

এছারাও এই আর্টিকেলটি থেকে জনতে পারবেন , ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম- ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা , ইসবগুলের ভুসি খেলে কি বীর্য গাড় হয় , ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে ।

খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়

আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, ইসবগুলের ভুসিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায়। যেমন প্রোটিন , আঁশ , ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান ইত্যাদি থাকে। খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। আসুন এই আর্টিকেলটি থেকে জেনে নি, খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ইসবগুলের ভুসিতে বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি খাদ্য আঁশ থাকে। এই আঁশ আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।


ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ইসবগুলের ভুসিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বিদ্যমান থাকে। ইসবগুলের ভুসিতে থাকা আস আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করে থাকে। এর ফলে আমরা খুব সহজে ডায়েট করতে পারি। ডায়েট করার জন্য বা ওজন কমানোর জন্য আমরা খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারি। এতে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক উপকৃত হব।

হজম শক্তি বাড়ায়ঃ ইসবগুলের ভুসি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আপনার যদি গ্যাস জাতীয় কোন সমস্যা হয় বা হজমে কোন ব্যাঘাত ঘটে তাহলে আপনি নিয়ম করে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খেলে আপনার হজমের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

আমাশয় থেকে রক্ষা করেঃ অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে বলা হয়েছে যে, ইসবগুলের ভুসি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ আমাশয় রোগের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে এবং সে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে পেট থেকে বের করতেও পারে। তাই পেটের সুস্থতা এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেই কিন্তু আমাদের পাইলসের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই যাদের পাইলসের সমস্যা হয়ে থাকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তাদের ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খেতে বলেন।

ইসবগুলের ভুসি কতদিন খাওয়া যায়

আমরা সকলেই জানি যে , ইসবগুলের ভুসি রাতে ভিজিয়ে রেখে তারপর সকালে সেগুলো খেতে হয়। ইসবগুলের ভুসির বৈজ্ঞানিক নাম "Plantago ovata"। ইসবগুলের ভুষি একটি শীতকালীন ফসল এবং একবর্ষজিবি উদ্ভিদ। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে , ইসবগুলের ভুষি আমাদের শরীরের ৮ থেকে ১০ টি রোগ নিরাময়ের কাজ করে থাকে। তবে এই রোগ নিরাময়ের কাজ করবে যদি আপনি ইসবগুলের ভুসি সঠিক নিয়মে খেয়ে থাকেন।


আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা ইসবগুলের ভুসি কতদিন খাওয়া যায়। মূলত ইসবগুলের ভুসি আপনি প্রতিদিন যদি খান তাহলে আপনার শারীরিক কোন ক্ষতি হতে পারে। ইসবগুলের ভুসি মূলত ৮ থেকে ১০ দিন নিয়ম করে খাওয়া যায়। ইসবগুলের ভুসি যদি আপনি পরিমাণে বেশি এবং ৮-১০ দিনের বেশি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শারীরিকভাবে ক্ষতি হতে পারে। তাই নিয়ম মেনে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

কোন কিছু যদি আপনি নিয়মের বাহিরে বা অতিরিক্ত খেয়ে থাকেন তাহলে সেই উপাদানের উপকারটি আপনি সঠিকভাবে পাবেন না। তেমনি ইসবগুলের ভুসির ক্ষেত্রেও এমনটাই হয় , অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। এই আর্টিকেলটি থেকে জানব ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ।

ইসবগুলের ভুষি অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এক গ্লাস (২৫০মিলি) পানিতে ৮-১০ গ্রাম ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে আপনি দিনে এক থেকে দুই চা চামচ (১৬-২০ গ্রাম) পর্যন্ত ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। এক ধরনের ডায়েটারি ফাইবার হিসেবে কাজ করে থাকে ইসবগুলের ভুসি । এক থেকে দুই চা চামচ ইসবগুলের ভুষি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সঙ্গে বা গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

তবে ইসবগুলের ভুসি বেশিক্ষণ পানিতে বা দুধে ভিজিয়ে রাখা উচিত নয় , কারণ এতে ইসবগুলের ভুসির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর সেটা পান করে ফেলুন। এতে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা

ইসবগুলের ভুসিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় যেমনঃ এক টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসিতে ৫৩% ক্যালরি , ০% ফ্যাট , ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম , ১৫ মিলিগ্রাম শর্করা , ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। ইসবগুলের ভুসিতে থাকা এসবগুলো উপাদান আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। তাই আসুন জেনে নেই ইসবগুলোর ভুসি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

  • আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যাদের প্রসবের সময় নিয়মিত জ্বালাপোড়া করে থাকে। এরকম সমস্যা যাদের আছে তারা ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এতে আপনার অনেক উপকার হবে। এটি যদি আপনি সকাল বিকাল নিয়ম করে খেতে পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আপনি সুফল পাবেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ইসবগুলের ভুসি। আমাদের যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া বা কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। এরকম কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে আপনি ইসবগুলের ভুসি খেলে আপনার পাকস্থলীতে গিয়ে এটি ফুলে যায় এবং পেটে সব বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে।
  • আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় মূলত খাবারের অনিয়মের কারণে বা অতিরিক্ত গ্যাস জাতীয় খাবারের কারণে। তাই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা নিয়ম করে প্রতিদিন ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন এতে অনেকটা উপকার পাবেন।
  • ইসবগুলের ভুসি আমাদের ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনি যদি ইসবগুলের ভুসি দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খান তাহলে আপনি ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাবেন। আর ইসবগুলের ভুসি আমাদের তরল মলকে খুব সহজেই শক্ত করে দিতে পারে। এর ফলে আমাদের ডায়রিয়ার মত সমস্যা খুব সহজে ঠিক হয়ে যায়।
  • ইসবগুলের ভুসি আমাদের হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। কারণ ইসবগুলের ভুসিতে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তাই হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে আমাদের ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • আমাদের শরীরের জন্য ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটি আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পর এটি আমাদের পাকস্থলীতে গিয়ে এক ধরনের জেলির মতো রূপ ধারণ করে নেয়। তখন এটি আমাদের শরীরের গ্লুকোজের ভাঙ্গন এবং শোষণের গতিকে ধীরে করে দেয়। যার ফলে আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ইসবগুলের ভুসি আমাদের পাইলসের মত রোগ কেউ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুসিতে থাকা আঁশ আমাদের পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং আমাদের মলকে নরম করতেও সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের পাইলসের মতো রোগ হবার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে। তবে এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিতে হবে।
  • ইসবগুলের ভুসি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ইসবগুলের ভুসি আমাদের অন্যান্য ফ্যাট জাতীয় খাবারের রুচিও কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি অন্যতম উপাদান। ইসবগুলের ভুসি যদি সকালে খালি পেটে খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ওজন দ্রুত কমে যাবে।

ইসবগুলের ভুসি খেলে কি বীর্য গাড় হয়

ইসবগুলের ভুসি খেলে আমাদের শারীরিক অনেক উপকার হয়ে থাকে। তবে এই উপকারগুলো হবার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়মে ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে। শারীরিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হল বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়া একটা সমস্যা। এই সমস্যার জন্য কি ইসবগুলের ভুসি কার্যকর হবে? প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেই ইসবগুলের ভুসি খেলে কি বীর্য গাড় হয়।

ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খেয়ে বীর্য গাঢ় করার জন্য আপনাকে ইসবগুলের ভুসির সাথে আরো কিছু উপাদান মিশাতে হবে যেমন দুধ, মধু ইত্যাদি । তবে এই সব খাবার এর অপর নির্ভর করলে হবে না । এর সাথে আর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেমন রসুন, কালজিরা এবং এর পাশাপাশি যদি আপনার হস্তমৈথুন করার অভ্যাস থাকে তাহলে সেটা বাদ দিতে হবে । রাতে শোয়ার আগে ইসবগুলের ভুসির সাথে দুধ ও মধু মিশিয়ে খেলে বীর্য গাঢ় হয় এবং সহবাসের সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ায় উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে । তবে ইসবগুলের ভুসি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে । আসুন জেনে নি ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।
  • পেটে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে ।
  • ডায়ারিয়ার সমস্যা হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
আপনার যদি এলার্জির মতো থাকে তাহলে বিভিন্ন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমনঃ
  • শ্বাস কষ্টের সমস্যা হয় ।
  • আপনার শরীরে চুলকানির মতো সমস্যা হয়।
  • শরীরের চামড়ায় লাল ফুসকুনি দেখা দিতে পারে।
  • চুলকানির কারনে গলা ও মুখ ফুলে জেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে জেনেছি , খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় , ইসবগুলের ভুসি কতদিন খাওয়া যায় , ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম , ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা , ইসবগুলের ভুসি খেলে কি বীর্য গাড় হয় , ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি এই সকল তথ্য সম্পর্কে। এই সকল তথ্য সম্পর্কে আরো জানতে কমেন্ট করে জানাবেন এবং এই সকল তথ্য আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন । আর্টিকেলটি ভাল লেগে থাকলে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url