যে কারণে বিটরুট খাবেন - বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
বিটরুট নামের এই কালছে লাল রংয়ের সবজিটি আমাদের দেশে খুব পরিচিত না। অনেক মানুষ এটাকে বাজারে দেখলেও কিনতে চায় না। শীতকালে এই সবজিটি উৎপাদন হলেও সব সময় এই সবজিটি দেখা যায়। এই সবজিটির পুষ্টিগুন আগুন অনেক বেশি। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক বিটরুটের উপকার সম্পর্কে।
এছাড়া ওই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন বিটরুট কি, বিটরুটের পুষ্টি উপাদান, বিটরুট যেভাবে খাবেন , যে কারণে বিটরুট খাবেন , বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা , বিটরুট কাদের খাওয়া উচিত নয় ও প্রতিদিন বিটের জুস পান করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে । এই সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটির সাথে থাকুন।
বিটরুট কি
বিটরুট হল এক ধরনের সবজি। বাংলাদেশের এটির পরিচিতি না থাকলে বাইরের দেশে এটি খুবই প্রচলিত একটি সবজি। বিটরুটের বৈজ্ঞানিক নাম বেটা ভালগারিস। এই সবজিটি দেখতে কিছুটা কালচে লাল রঙের এবং পেয়াল আকৃতির মত পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণে সমৃদ্ধ সবজি।
বিটরুটের পুষ্টি উপাদান
ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর বিটরুট। বিটরুটে রয়েছে আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
বিটরুট যেভাবে খাবেন
বিটরুট খাওয়ার তেমন কোন আলাদা পদ্ধতি নেই । বিভিন্ন রকম ভাবে বিট খাওয়া যায় যেমনঃ
- বিটের ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ব্লেন্ডার মেশিনে দিয়ে জুস করে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ লাল তরমুজ চেনার উপায় ও তরমুজের উপকারিতা
- বিটরুট কে আপনি গরম পানিতে সেদ্ধ করে খেয়ে নিতে পারবেন। তবে বেশিক্ষণ আগুনের তাপে থাকলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যায়।
- আপনি যদি পারেন তাহলে এই সবজিটি কাঁচাও খেতে পারেন। এতে আপনার অনেক উপকার হবে।
- বিটরুট আপনি তেল লবণ দিয়ে নিজেও খেতে পারবেন। তবে এর পুষ্টি গুনাগুন টা অনেকটাই কম পাবেন।
- বিট , কলা , মাখন ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারবেন।
যে কারণে বিটরুট খাবেন
বিট রুট খাওয়ার অনেক ধরনের কারণ রয়েছে। এটি আমাদের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আরো বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে । আসুন দেখে নেওয়া যাক যে কারণে বিটরুট খাবেন।
- বিট আমাদের শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তাই নিয়মিত বিটরুট খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ হানি নাটস খাওয়ার উপকারিতা কি কি
- আমাদের শরীরের ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এই বিটে রয়েছে। বিট আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং টক্সিক বের করে দিতে সাহায্য করে।
- আমাদের শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ করতেও বীর ভূমিকা পালন করে থাকে। বিটের মধ্যে পাওয়া যায় পরিমাণ মতো আয়রন এবং এনিমিয়া যা আমাদের রক্তের জন্য খুব উপকারী । এগুলো উপাদান আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।
- বিট আমাদের প্রাণশক্তি এবং কাজ করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। বিট খাওয়ার পরে দেহের অক্সিজেন সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি ভাই এর কারণে বিভিন্ন ধরনের দৌড়বিদ বা খেলোয়াড়রা নিয়মিত বিটের জুস খেয়ে থাকেন।
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক বিট রুট এই সবজি সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানিনা। এই সবজিটি বাংলাদেশে এখন প্রচলন কম হলেও , এর উপকারি গুনের কারণে ধীরে ধীরে এটা সকল ধরনের মানুষের কাছেই পরিচিত হয়ে উঠবে। প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
- উচ্চ রক্তচাপ যাদের আছে তাদের জন্য বিটরুট অনেক উপকারী। এই সবজিতে রয়েছে নাইট্রেটস, যেটা আমাদের রক্ত প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
- বিটরুটে প্রত্যেকটি পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং চেহারায় বয়সের দাগ কমায়।
- বিটরুটে বিটেইন থাকার কারণে আমাদের যকৃতে কোন চর্বি জমতে দেওয়া হয় না।
- কোলন ক্যান্সার দূর করতে সবজি অনেক কার্যকরী।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে এই সবজির জুস খাওয়া হলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে যায়।
- বিট রুট আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
- এই সবজি আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সক্ষম হয় যার কারণে আমাদের রক্তশূন্যতার মতো রোগ হয় না।
- বিটরুট একটি ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি যা আমাদের শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া থেকে বিরত রাখে।
- রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে বিটের জুস সাহায্য করে।
- নিয়মিত বিটের জুস খেলে চোখ ভালো থাকে।
- প্রতি 100 গ্রাম বিটে ২৭ ভাগফলিক এসিড থাকে যার কারণে গর্ভাবস্থায় এটি খেলে শিশুর জন্মকালীন ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- বিটরুট লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে কারণ এতে থাকা পরিমাণ মত ফাইবার আমাদের শরীরকে ডি টক্সিফাই করে রাখে।
বিটরুট কাদের খাওয়া উচিত নয়
বিটরুট এমন একটি সবজি যা আমাদের সকল ধরনের মানুষদের শুধু উপকার করেই থাকে। কিন্তু বিটরুট আসলেও আমাদের সকল ধরনের মানুষদের খাওয়া উচিত নয়। কারণ বিট এর কারণে বিভিন্ন রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের শরীরে আগের থেকে যাওয়ার রোগ বৃদ্ধি ও পেতে পারে। তাই আসুন দেখে নেওয়া যাক বিট রুট কাদের খাওয়া উচিত নয়।
- বিটরুট আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী হওয়া সত্বেও এটা নিয়মিত খাওয়া উচিত নয় । সপ্তাহে ৪-৫ দিন খেতে হবে।
- যাদের শরীরে নিম্ন রক্ত চাপের সমস্যা তাদের বিট রুট খাওয়া উচিত নয় কারণ এটি আমাদের রক্তচাপ আরো কমিয়ে দেয়।
- অনেকেই আছে যারা বিটরুট খেলে এলার্জির মত সমস্যায় ভোগে। এলার্জির কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা হয়। তাদের বিট রুট খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের কিডনিতে সমস্যা বা কিডনিতে পাথর আছে তারা বিট রুট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- যাদের ডায়াবেটিসের মত সমস্যা আছে তারা এই সবজি থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এই সবজিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ অনেক বেশি যার ফলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
- অনেকেই আছেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা যদি বিটরুট খেতে চান তাহলে অবশ্যই আগে ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
প্রতিদিন বিটের জুস পান করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন উপকার তেমনি আবার অপকার বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে বিটের জুস আমাদের কি কি ধরনের উপকার করে থাকে । প্রিয় পাঠক এখন জেনে নিয়ে পান করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেঃ
- এলার্জিঃ যদিও বিটের জুস খাওয়ার কারণে কোন ধরনের এলারি সম্মুখীন হতে হয় না কিন্তু রান্না করার সময় বিটের বাষ্প আমাদের নিঃশ্বাসে গিয়ে আমাদের চোখ লাল এবং চুলকানি হওয়ার মত সমস্যা হতে পারে।
- কিডনিতে পাথর হতে পারেঃ বিটের রসে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট নামও পাওয়া যায়। এই যৌগটি আপনার শরীরের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- নিম্ন রক্তচাপঃ বিট আমাদের শরীরের উপর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু আপনার নিম্ন রক্তচাপ হলে বিট খাওয়ার ফলে আপনার রক্তের চাপ আরো কমে যাবে এতে আপনার আরো অন্য ধরনের সমস্যা হবে।
- লাল বা গোলাপি প্রস্রাবঃ প্রতিদিন বিটের জুস পান করলে আপনার প্রস্রাব একসময় লাল বা গোলাপি হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ডাক্তারদের মতে এটা কোন সমস্যা নয় তবে আপনি যখন বিটের জুস খাওয়া বাদ দিয়ে দিবেন তখন আবার স্বাভাবিক রং এ ফিরে যাবে।
পরিশেষে
প্রিয় পাঠক বিটরুট একটি ঔষধি সবজি যেটা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম ঘাটতি পূরণ করে থাকে এবং বিভিন্ন রকম প্রদাহ থেকে বিরত রাখে। তবে নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ বিটরুটে বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ করার উপাদান থাকার পাশাপাশি রক্তচাপ কমানোর উপাদানও রয়েছে।
তাই আপনার রক্তচাপ যেন কমে না যায় এজন্য বিটরুটের জুস নিয়মিত খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রিয় পাঠকের আর্টিকেলটিতে বিটরুট সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url