কত টনের এসিতে কত টাকা বিদ্যুৎ বিল - এসির বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
আবহাওয়া এত গরমের কারণে সকলের জীবন প্রায়ই অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তেমনি গরম বেশি হয়ে গেলে এসির ব্যবহার কেমন জানি বেড়ে যায়। আবার আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা বিদ্যুৎ বিলের খরচের কারণে এসি কিনতে ভয় পায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক কত টনের এসিতে কত টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়।
এছাড়াও আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারবেন, এসি চালানোর সঠিক নিয়ম , এসির তাপমাত্রা কত রাখা উচিত , এসির বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে। এই সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত অনুরোধ রইল।
এসি চালানোর সঠিক নিয়ম
দিন দিন আমাদের চারপাশের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে । তাই আমরা অনেকেই গরমের থেকে রক্ষা পেতে এসির উপরে ভরসা করে থাকি। দ্রুত ঘর ঠান্ডা করার জন্য এসির বিকল্প কোন কিছু আর নেই। কিন্তু এই যন্ত্রটি চালানোর জন্য অনেকেই সঠিক নিয়ম জানেন না। এর ফলে আপনার রুমও ঠান্ডা হতে সময় লাগে বেশি এবং আপনাকে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয় বেশি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এসি চালানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
আপনার ঘরের তাপমাত্রা যত বেশি হবে এই যন্ত্র দিয়ে আপনার ঘরকে ঠান্ডা করতে ততটাই বেশি সময় নেবে। এর ফলে আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি দিতে হবে। এজন্য আপনাকে সঠিক নিয়ম মেনে এসি চালনা করতে হবে। এসি চালানোর সঠিক নিয়ম হলঃ ঘরের কিছু পরিবর্তন যেমন ঘরের দরজা এবং জানালায় মোটা পর্দা ব্যবহার করতে হবে। মোটা পর্দা ব্যবহারের ফলে রুমের ভেতরে বাহিরের গরম এবং আলো কম আসবে এর ফলে ঘর তাড়াতাড়ি শীতল হবে।
এসির বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বলে দেয়া হয়েছে, আগে আপনি আপনার রুমের জানালার দরজা খুলে ২০ মিনিট ধরে সিলিং ফ্যান চালিয়ে রাখুন। তারপর দরজা জানালা বন্ধ করে এসি চালাবেন এতে আপনার ঘরটি ঠান্ডা হতে খুবই কম সময় লাগবে। এর ফলে আপনার এসির বিদ্যুৎ বিল টাও কম আসবে।
এসির তাপমাত্রা কত রাখা উচিত
তীব্র গরমের কারণে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির কোনো আশ্বাস নেই যদিও বৃষ্টি দেখা পাওয়া যায় কিন্তু তাপমাত্রা কমার কোন নাম নেই। তাই মানুষ তাপমাত্রা কমানোর জন্য এয়ার কন্ডিশনার বা এসি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ হচ্ছেন বেশি। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা তাপমাত্রা কত রাখা উচিত তা সম্পর্কে জানেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক এসির তাপমাত্রা কত রাখা উচিত।
এসি আমাদের রুমকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শীতলতা উপভোগ করায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এসি রুমের ভেতরে থাকা আমাদের জন্য ভালো নয়। কারণ সব সময় এসি রুমে থাকার ফলে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে। আমাদের শরীরে হিট মেকানিজম নামের একটি প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর প্রাকৃতিক তাপমাত্রার সাথে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা মানিয়ে নেয়।
আপনার রুমের এসি যদি খুব কম তাপমাত্রায় চালানো থাকে তাহলে বাহিরের তাপমাত্রার সাথে আপনার রুমের তাপমাত্রার অনেক বড় পার্থক্য তৈরি হয়ে যাবে। এর ফলে আপনার শারীরিকভাবে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। আবার আপনি যদি আপনার রুম থেকে বাহিরে চলে যান তাহলে হঠাৎ করে আপনার গরম টা বেশি ধরবে এর ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আমাদের রুমের এসির সঠিক তাপমাত্রা ২২ থেকে ২৮ এর মধ্যে রাখা উচিত।
এই তাপমাত্রা দেওয়ার কারণ, এই তাপমাত্রাতে আপনার শরীর নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে এবং জ্বর সর্দি অনেক কম থাকবে। রাতে এসে চালানোর ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে আপনি যদি খুবই কম তাপমাত্রায় ac চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে এইটি আপনার জন্য খুবই বিপদজনক। কারণ ঘুমিয়ে পড়ার পর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার মত ক্ষমতা শরীরের থাকে না। তাই এটি আমাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। আর আপনার রুমে যদি ছোট শিশু থাকে তাহলে আপনাকে এসি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
এসি চালানোর জন্য আমাদের সবচেয়ে উত্তম তাপমাত্রা হলো ২২ থেকে ২৮ এর মধ্যে তাপমাত্রা সেট করে রাখা। ঘর পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে এসি বন্ধ করে দেওয়া। এভাবে আপনি আপনার ঘরে তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবেন।
কত টনের এসিতে কত টাকা বিদ্যুৎ বিল
অতিরিক্ত গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার কারণে আমরা আমাদের ঘরে এসি লাগিয়ে থাকি। আমাদের ঘরে এসি লাগানোর পরেও আমরা চিন্তিত থাকি এসির বিদ্যুৎ বিল নিয়ে। তাই এসি কিনার আগেই জেনে নিন কত টনের এসি তে কত টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। তারপর বিবেচনা করে কত টনের এসি লাগাবেন নিজে ভাবুন। আসুন জেনে নেওয়া যাক , কত টনের এসিতে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয়।
এসির বিল কিসের উপর নির্ভর করে তা জানার আগে এসি নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এসি কেনার সময় অবশ্যই আপনার ঘরের উপর নির্ভর করে এসি কিনতে হবে। আপনার ঘর যদি আকারে বড় হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে বড় এসি কিনতে হবে। আপনার ঘরের চালানোর পরে অবশ্যই আপনার বিদ্যুৎ বিলটা বেশি আসবে। বাড়িতে ব্যবহারের বা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য এসির মাপ হয়ে থাকে টন হিসেবে। যেমনঃ ১ টন, ১.৫ টন , ২ টন ইত্যাদি এরকম মাপের হয়ে থাকে।
এই টনের মাপ এসি লোড বোঝায় না এটি বোঝায় রুমকে ঠান্ডা করার ক্ষমতাকে। যদি আপনার ঘরের আয়তন ১০০০ ঘনফুট হয়ে থাকে তাহলে সাধারণত আপনার ১ টনের এসিতেই কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার ঘর ১০০০ ঘনফুটের বেশি এবং আপনার ঘরে অতিরিক্ত গরম বেশি তাহলে আপনার ঘরকে ঠান্ডা করার জন্য ১.৫ টনের এসি ব্যবহার করতে হবে।
এসি কেনার সময় যদি দেখেন আপনার এসিতে২.৫ KW লিখা থাকে তাহলে ভাবতে হবে ওই এসিটি আপনার ঘরে এক ঘন্টা চললে২.৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে। এভাবে মোটামুটি হিসাব করলে আপনি আপনার এসির বিদ্যুৎ বিলটি বাহির করতে পারবেন যেমনঃ
১.৫ টনের একটি এসি রেগুলার ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটানা 50 মিনিট করে চললে এর মাসিক বিদ্যুৎ খরচ হবে২৩৫.৪১ কিলোওয়াট এর মত। এর বিদ্যুৎ বিল১৫৬৩ টাকার কিছু বেশি। একই সময় যদি আপনি ২ দুই টনের এসি চালান তাহলে আপনার বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রায়২৫০০ টাকার মত। এক টনের এসিতে এই বিলটা হবে ১৩০০ টাকার মত। প্রিয় পাঠক আশা করি বুঝতে পেরেছেন কত টনের এসিতে কত টাকা বিদ্যুৎ বিল।
এসির বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
গরমের সময় শুরু হয় এই অতিরিক্ত এসির ব্যবহার। সেই সাথে বাড়তেও থাকে আমাদের বিদ্যুৎবিদের পরিমাণ। কিন্তু আমরা যদি সঠিক নিয়মে এসির ব্যবহার করে থাকি তাহলে আমরা কিছুটা হলেও বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ী হতে পারব। আসুন জেনে নেওয়া যাক এসির বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়।
- সঠিকটা মাত্রা নির্বাচনঃ এসি চালানোর সময় আপনি কোন সময় এসির সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় রাখবেন না। এতে আপনার শারীরিক ক্ষতি হতে পারে এবং আপনার বিদ্যুৎ বিল টাও বেশি আসবে। ব্যুরো অব এনার্জি এফিসিয়েন্সি (বিইই) বলছে , মানুষের দেহের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে মানুষের শরীর অসুস্থ থাকবে এবং এসিতেও বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। তাই আমরা পেয়েছি সব সময় ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা মধ্যে রাখার চেষ্টা করব।
- পাওয়ার সুইচ বন্ধ রাখাঃ আপনি যদি কোন একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস নিয়ে কাজ করে থাকেন এবং সেই ডিভাইসের কাজ যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে তার পাওয়ার সুইচ বন্ধ করে রাখাই ভালো কারণ পাওয়ার সুইচ চালু থাকলে অনেক শক্তির অপচয় হয়ে যায়। আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছে যারা এসির রিমোট দ্বারা এসিকে বন্ধ করে থাকেন কিন্তু এটি আমাদের জন্য উচিত নয়। এসির চালু থাকার ফলে প্রচুর পরিমাণ শক্তির অপচয় হতে পারে তাই এসির কাজ শেষ হয়ে গেলে পাওয়ার সুইচ বন্ধ করে রাখা উচিত।
- টাইমার ব্যবহার করাঃ প্রত্যেকটি এসিতেই টাইমার সেট করা যায়। তাই এসিতে নির্দিষ্ট সময় চালানোর জন্য এসিতে টাইমার সেট করা উচিত। আপনি যদি রাতে ঘুমানোর সময় এসি দিয়ে থাকেন এবং এসিতে টাইমার সেট না করলে আপনার সেটা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এভাবে সারারাত এসে চালানোর ফলে আপনার শারীরিক ক্ষতি হবে এবং আপনার বিদ্যুৎ বিলটা বেশি আসবে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে এসি ব্যবহারের সময় টাইমার সেট করে ঘুমানো উচিত।
- সার্ভিসিং করানোঃ প্রত্যেকটি ইলেকট্রিক সার্ভিসিং করানোর প্রয়োজন। এসির ক্ষেত্রেও তেমন বিকল্প কোনো কিছু নয়। একটি পর্যাপ্ত সময়ে এসি ব্যবহারের ফলে এসি তে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালি জমে থাকে। এর ফলে এসির ভেতরের যেকোনো যন্ত্রপাতির যেকোনো ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে। অথবা ধুলাবালি জমার কারণে এসিতে লোড বেশি পড়তে পারে এর ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ চালানোর পরে এসি সার্ভিসিং করানো উচিত। এতে আপনার ডিভাইস দিয়েও ভালো থাকবে এবং বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
- দরজা জানালা বন্ধ করে রাখাঃ এসি ব্যবহারের প্রথম শর্ত হলো আপনার ঘরের দরজায় এবং জানালা বন্ধ করে ব্যবহার করতে হবে। যদি দরজা এবং জানালা বন্ধ না করা হয় তাহলে আপনার ঘর শীতল হতে অনেক সময় লাগবে। এর ফলে আপনার বিদ্যুৎ বিল টা বেশি আসবে। তাই এসি যখন ব্যবহার করবেন অবশ্যই আপনার ঘরের দরোজা এবং জানালা বন্ধ করে রাখবেন। এভাবে আপনি আপনার বিদ্যুৎ বিল বাচাতে পারবেন।
কম দামে ভালো মানের এসির নাম ও দাম
আমাদের মাঝে অনেকে আছেন যারা গরম অতিস্ত হওয়ার কারণে একটি ভাল মানের এসি ক্রয় করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এসির সঠিক দাম সম্পর্কে জানেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন টনের এসির দাম সম্পর্কে । আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে কম দামে ভালো মানের এসির নাম ও দাম সম্পর্কে। আসুন জেনে নেই তাহলে এ সকল তথ্য সম্পর্কে।
এসির নাম | এসির সাইজ | এসির দাম |
---|---|---|
গ্রী এসি | ১.৫ টন | ৫৮,৫০০/- |
জেনারেল এসি | ২ টন | ৯৯,৯০০/- |
মিডিয়া এসি | ১.৫ টন | ৪৭,৯০০/- |
শার্প এসি | ১.৫ টন | ৭৩,০০০/- |
সিঙ্গার এসি | ১ টন | ৫৯,১০৪/- |
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বিভিন্ন রকম তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন যেমন এসি চালানো সঠিক নিয়ম সম্পর্কে, এসি কত তাপমাত্রায় রাখা উচিত তা সম্পর্কে, কত টনের এসিতে কত বিদ্যুৎ বিল এবং এসির বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় সম্পর্কে। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই ওয়েবসাইট থেকে ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url