হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ - হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
এই তীব্র গরমে আমাদের চারপাশের অনেক মানুষ কারণে মারা যাচ্ছেন। তারা যদি হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতেন তাহলে হয়তো তারা আজ বেঁচে থাকতেন। এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করব হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে।
এছাড়াও আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারবেন হিট স্ট্রোকের কারণ কি , হিট স্ট্রোকের লক্ষণ , হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কাদের বেশি ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে। এ সকল তথ্যগুলো জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
হিট স্ট্রোক কি
হিট স্ট্রোক হলো একটি তাপ জনিত গুরুতর অসুস্থতা । আমাদের শরীর যখন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বা শরীরে তাপমাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ঘামের প্রক্রিয়ায় শরীরের তাপমাত্রা কমতে ব্যর্থ হয় তখনই হিট স্ট্রোক হয়। আপনার আশেপাশে যদি কারো হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে তাহলে দেখবেন তার শরীরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যাবে। এই তাপমাত্রাতে যদি রোগের চিকিৎসা করা না হয় তাহলে রোগী স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে বা রোগীর মৃত্যু হবে।
হিট স্ট্রোক এটি একটি গ্রীষ্মকালীন সমস্যা । এক কথায় বলতে গেলে হিট স্ট্রোক এমন একটি সমস্যা যেটা শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হয়ে থাকে। আপনার শরীরে তাপমাত্রা যদি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই অতি গরমকালে যেন আমাদের হিট স্ট্রোক না হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
হিট স্ট্রোকের কারণ
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি কি। এখন আমরা জানবো হিট স্ট্রোকের কারণ কি। হিট স্ট্রোক অনেক রকমের কারণের জন্য হয়ে থাকে। কিন্তু এর বিশেষ কারণ হলো অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে। আসন ধরে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোকের কারণ কি কি।
- অতিরিক্ত গরমের মধ্যে যদি আপনি তীব্র রোদে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে আপনার হিট স্ট্রোক হতে পারে ।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের শরীরের বেশিরভাগ পানি ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় এবং ঘামের সাথে সাথে আমাদের শরীরের সব লবন ও তরল পদার্থ বেরিয়ে যায়। যার ফলে আমাদের পানি শূন্যতা দেখা দেয় এবং এই কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের ওষুধ যেমন মূত্রবর্ধক, anticholinergics, এবং beta-blockers, শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এর ফলে আমাদের শরীরের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- এছাড়াও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হিট স্ট্রোক হয়।
- যাদের শরীরে ডায়াবেটিকস রয়েছে এবং যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ
আমরা আমাদের চারপাশে অনেক মানুষকে দেখেছি যারা হিট স্ট্রোকের কারণে মারা গেছেন। তারা যদি হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জানতেন তাহলে হয়তোবা তারা প্রাথমিক চিকিৎসার কারণে বেঁচে যেতেন। প্রত্যেকটি রোগের লক্ষণই দেখা যায় তেমনি হিট স্ট্রোকেরও লক্ষণ রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি।
- প্রথমত আপনার গিরিষ্ট বলে আপনি চোখে অন্ধকার দেখবেন বা হ্যালুসিনেশন মনে হবে।
- হঠাৎ আপনার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
- কথা বলার সময় কথা জড়িয়ে যাবে।
- চেতনা হারিয়ে যাবেন বা কোমাতে চলে যাওয়া সম্ভাবনা আছে।
- শরীর প্রচুর গরম হবে এবং প্রচুর পরিমাণে ঘাম হবে।
- খিঁচুনির মতো সমস্যা হবে।
- আপনার শরীরের তাপমাত্রা খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।
- আপনার অনেক বমি বমি ভাব হবে।
- আপনার হার্টবিট অতিরিক্ত চলাচল করবে।
- আপনার হাত ও পায়ের পেশি ব্যথা হবে।
- আপনার শরীর বিশৃংখল হয়ে যাবে।
এগুলোই মূলত একটি মানুষের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ।
হিট স্ট্রোকের কারণে যেসব ক্ষতি হয়
হিট স্ট্রোক একটি মারাত্মক রোগ। কোন মানুষ যদি হিট ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে খুব দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। নয়তো তার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোকের কারণে যেসব ক্ষতি হয়।
মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণঃ অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত নালীর ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হবে এবং এর কারণে আমাদের মৃত্যু হয়ে যেতে পারে।
মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যুঃ অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলি খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় যার কারণে আমাদের মৃত্যু হতে পারে। মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে যায়, চিন্তাভাবনা করতে অনেক অসুবিধা হয় এবং এর কারণে মৃত্যু হতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়েঃ হিট স্ট্রোকের কারণে আমাদের শরীরের হৃদপিন্ডের উপরে প্রচুর পরিমাণে চাপের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যকৃতের ক্ষতিঃ হিট স্ট্রোক আমাদের যকৃতের ক্ষতি করে থাকে।
কিডনি ব্যর্থতাঃ হিট স্ট্রোকের কারণে আমাদের কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিডনি ব্যর্থতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চর্মের ক্ষতিঃ হিট স্ট্রোকের কারণে আমাদের ত্বকে পুড়ে যেতে পারে এবং ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সর্বশেষে যদি আপনি হিট স্ট্রোকের কারণে চিকিৎসকের কাছে না যান তাহলে এর পরিণতি মৃত্যু হবে। তাই হিট স্ট্রোকের লক্ষণ জানার পরে যদি আপনার শরীরে এরকম কোন লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাবেন।
হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রাথমিক চিকিৎসার কারণে যেকোনো ধরনের রোগের সমস্যা কিছুক্ষণের জন্য সমাধান করা যেতে পারে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না । প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াই হয় কিছুক্ষণের জন্য যেন সমস্যা সমাধান হয় এবং সেই রোগীকে যেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রেও বিকল্প কিছু নয়। হিট স্ট্রোক হলেও আপনি রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা কি কি।
- রোগীকে খুব দ্রুত ছায়াযুক্ত শীতল জায়গায় নিয়ে যেতে হবে এবং রোগীর শরীরে যা পোশাক আছে সবকিছু খুলে ফেলতে হবে যেন রোগীর শরীরে বাতাস লাগে।
- হিট স্ট্রোকের রোগীকে সম্ভব হলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে হবে।
- আপনি যদি রোগীকে গোসল করাতে না পারেন তাহলে অবশ্যই ভেজা কাপড় দিয়ে ঘন ঘন তার শরীর মুছে দিতে হবে।
- তার শরীরের উপর ভেজা কাপড় বা ভেজা গামছা দিয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে।
- রোগীর শরীর দ্রুত করার জন্য সকলে মিলে বাতাস করতে হবে।
- রোগীর শরীর অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণে হিট স্ট্রোক হয়। তাই হিট স্ট্রোক হলে রোগীর মাথা, ঘাড় , বগল ইত্যাদিতে ঠান্ডা পানি দিতে হবে বরফ দিয়ে রাখতে হবে।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
হিট স্ট্রোক একটি মরণব্যাধি রোগ বলতে গেলেই চলে। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি হিট স্ট্রোক এর কারণে আমাদের কি কি সমস্যা হতে পারে। এইসব সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদের সকলের হিট স্ট্রোক এড়িয়ে চলতে হবে। আগে আমরা জেনে নি হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে ।
- তীব্র গরমে আমাদের ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের পোশাক পড়তে হবে।
- ঠান্ডা এবং তরল পানি পান করতে হবে যাতে আমাদের পানি শূন্যতা দেখা না দেয়।
- অ্যালকোহল আমাদের শরীরকে খুব তাড়াতাড়ি গরম করতে পারে এবং পানি শূন্যতা করতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরমে অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকাই ভালো।
- অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য আপনি শসা, তরমুজ , ডালিম এবং কলা খেতে পারেন ।
- অতিরিক্ত গরমে আপনি অধিক পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
- অতিরিক্ত রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না বা চলাচল করবেন না।
- আপনি বাড়ির বাহিরে থাকলে সব সময় চেষ্টা করবেন ছায়াযুক্ত শীতল জায়গায় থাকার এবং ঘন ঘন ঠান্ডা তরল পানি পান করবেন।
- আমাদের ঘরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য আমরা ফ্যান ব্যবহার করে থাকি কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর জন্য আমাদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সবচেয়ে ভালো বা আপনার ঘরে আপনি এসি লাগাতে পারেন। এতে আপনার অতিরিক্ত গরম কম ধরবে।
- আপনি আপনার শরীরে খুব ঢিলেঢালা পোশাক পড়বেন এবং রোদের তাপ থেকে বাঁচার জন্য টুপি, সানগ্লাস এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন পোশাকটি যেন ঢিলেঢালা পোশাক হয় ।
- আপনার শিশুকে সবসময় যত্ন নিতে থাকুন। পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি তাকে অযত্নে রাখবেন না।
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি কাদের
প্রিয় পাঠক আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে হিট স্ট্রোক কোন কোন ব্যক্তিদের বেশি হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি কাদের থাকে।
- ছোট ছোট শিশুদের।
- অতি বয়স্ক ব্যাক্তিদের।
- গর্ভবতী মহিলাদের।
- কিছু ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তিদের।
- কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটি থেকে আমরা জানতে পেরেছি , হিট স্ট্রোক কি , হিট স্ট্রোক হওয়ার কারণ , হিট স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণ , হিট স্ট্রোকের কারণে যেসব ক্ষতি হয় , হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা , হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় , হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি কাদের ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং ওয়েবসাইট থেকে ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url